শনিবার, ডিসেম্বর ৭

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে

0

স্বাস্থ্য ডেস্ক: ডেঙ্গুর প্রকোপের এই বছরে এরইমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাদের তথ্য মতে, এ বছর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন অগাস্ট মাসে, রোগীর সংখ্যা ছিল অর্ধ লক্ষাধিক। মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে এবার অন্তত ২৬৪ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে ১২৯ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে তারা। শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডা. বোরহান উদ্দিন বলেন, ডিসেম্বর এখনও বাকি রয়েছে। এরই মধ্যে ১১ মাসে লাখ ছাড়িয়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এই সংখ্যা ২০১৮ সালের এই সময়ের তুলনায় ১০ গুণ। ঢাকায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস এজিপ্টি মশা। মশাবাহিত এই রোগ বাংলাদেশে প্রথম দেখা দেয় ২০০০ সালে, সে সময় এই রোগে মারা যান ৯৩ জন। তিন বছর পর থেকে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার কমতে থাকে এবং কয়েক বছর এতে মৃত্যু শূন্যের কোটায় নেমে আসে। তবে গত বছর আবার বড় পরিসরে দেখা দেয় ডেঙ্গু, ১০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি ২৬ জনের মৃত্যু হয় সরকারি হিসাবে। এ বছর মে মাস থেকেই ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়, জুন ও জুলাইয়ে ক্রমশ বেড়েছে অগাস্টে তা মারাত্মক রূপ নেয়। তখন সমালোচনার মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক তৎপরতা নেয়। দুই বেলা ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গু মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা হয়। এ সব তৎপরতায় অক্টোবরেই ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসে। তবে তারপর আবারও সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কর্মসূচিতে শিথিলতা এসেছে। এখন ওষুধ না ছিটানোয় আবারও মশার উপদ্রব বেড়েছে বলে জানান মগবাজারের পেয়ারাবাগের একটি বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। এখন ডেঙ্গুর ঝুঁকি কমলেও সতর্কতা অবলম্বনের ওপর জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. বোরহান উদ্দিন। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর জন্য জুলাই-অগাস্ট সময় ছিল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এখন আবহাওয়া শুকনো হয়েছে, ডেঙ্গু মশা বিস্তারের ঝুঁকিও কমেছে। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় প্রভাব কিন্তু রয়ে গেছে। ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তেমন ঝুঁকি নেই। তবে সতর্কতা অবলম্বন করতেই হবে। তিনি জানান, চলতি বছরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এ যাবত ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২০০০ সাল থেকে বছরওয়ারি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এটা বেশ কয়েক গুণ বেশি। মাসওয়ারি সংখ্যা তুলনা করে এ চিকিৎসক জানান, গেল বছর নভেম্বরে রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৯২ জন, সেখানে এ বছর এই মাসে তার তিন গুণেরও বেশি। আর চলতি অগাস্টে প্রতিদিনই গড়ে আড়াই হাজার করে আক্রান্তের রেকর্ড রয়েছে। এ অবস্থা থেকে নভেম্বরের শেষ দিকে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে ৭৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকায় ৩৭ জন ও ঢাকার বাইরে ৩৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল এর সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ নভেম্বর মোট ভর্তি রোগী ১,০০,০২১ জন। ছাড়প্রাপ্ত রোগী ৯৯,৩০৬ জন। বর্তমানে সারা দেশে ভর্তি রোগী ৪৫১ জন। এরমধ্যে ঢাকায় ২৫১ জন ও ঢাকার বাইরে ২০০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি রোগী ৭৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৭ জন ও বাইরে ৩৬ জন। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআরে ডেঙ্গু সন্দেহে ২৬৪ জনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে। এরমধ্যে পর্যালোচনা করে ১২৯ জনের ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।

Share.