শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৭

ওসমানী হাসপাতালে ভুয়া বিলে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

0

ঢাকা অফিস: সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসআর সামগ্রী সরবরাহ না করেই ২৯ লাখ ৭৮ হাজার ১৭২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।   ৫টি ভুয়া বিলের মাধ্যমে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর সঙ্গে হাসপাতালের সাবেক উপ-পরিচালক ডা. আব্দুছ সালাম ও হাসপাতালের সাবেক হিসাবরক্ষক আব্দুল কুদ্দুছ আটিয়াও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম (সাবেক) বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় ২০১৮ সালের ২৪ মে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, হাসপাতালের উপ-পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) ডা. আব্দুছ সালাম, তিনি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানাধীন আতুয়া গ্রামের মৃত ছোলাইমান আহমদের ছেলে। হাসপাতালের সাবেক হিসাবরক্ষক ও চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার মৃত আফাজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল কুদ্দুছ আটিয়া, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাহের এন্টারপ্রাইজের মালিক সিলেট নগরের ফাজিলচিস্ত এলাকার বাসিন্দা আবুল খায়েরের ছেলে আবু তাহের। অভিযুক্ত সাবেক হিসাবরক্ষক আব্দুল কুদ্দুছ ঠিকাদার আবু তাহেরের শ্বশুড় বলে জানান যায়। ঘটনার প্রায় এক বছর ৫ মাস পর গত ১ অক্টোবর ৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম। অভিযোগপত্রে হাসপাতালের সাবেক উপ-পরিচালক ডা. আব্দুছ সালাম ও ঠিকাদার আবু তাহের জামিনে আছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম, অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এর বাইরে আর কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ভুয়া বিল তৈরি করে হাসপাতালের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পায় দুদক। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের সকল প্রমাণ ও নমুনা স্বাক্ষর হস্তলিপি অভিজ্ঞদের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছে। এতে বিতর্কিত সব স্বাক্ষর ভুয়া ও জাল প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে কথিত এমএসআর সামগ্রী না পাওয়ার পরেও তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া ৫টি বিলের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ মামলায় দুদুকের তদন্ত কর্মকর্তা, কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি গৌছুল হোসেন, ওসমানী হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক, হাসপাতালের সাবেক পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আব্দুছ ছবুর মিঞাসহ ২৮ জনকে সাক্ষি করা হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, ২০১৫ সালের ২৮ জুন সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসআর সামগ্রী সরবরাহের জন্য দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মেসার্স তাহের এন্টারপ্রাইজকে এমএসআর সামগ্রী সরবরাহের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে কোনও এমএসআর সামগ্রী সরবরাহ না করেই ৫টি ভুয়া বিল বানিয়ে দাখিল করে। হাসপাতালের হিসাবরক্ষক (সাবেক) আব্দুল কুদ্দুছ আটিয়া এমএসআর সামগ্রী না পাওয়ার পরও ভুয়া বিলগুলো অনুমোদনের জন্য হাসপাতালের উপ-পরিচালক (সাবেক) ডা. আব্দুছ সালামের কাছে দাখিল করেন। পরে তারা পরস্পর যোগসাজশে সরকারি সেই বিল পাশ করেন সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেন। হাসপাতালের উপ-পরিচালক (সাবেক) ডা. আব্দুছ সালাম তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে অসৎ উদ্দেশে টোকেন নং-৮৫৮৬ (২০.৯.২০১৫), টোকেন নং- ৫৭২২ (২৭.১০.২০১৫), টোকেন নং-৪২২৯ (১০.১১.২০১৫), টোকেন নং-৬৪৬৯ (২৭.১.২০১৬), টোকেন নং-৬৪৭০ (২৭.১.২০১৬) ৫টি ভুয়া বিলের বিপরীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবু তাহের এন্টারপ্রাইজকে টাকা পরিশোধ করেন। বিল পরিশোধনের জন্য তিনি সিলেট নগরের চৌহাট্টা ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড ও ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড আম্বরখানা শাখা থেকে ৩৯ লাখ ৭ হাজার ৩০০ টাকা উঠান। বিষয়টি জানাজানি হলে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দুটি চিঠি পাঠান। পরে ঠিকাদার আবু তাহের ৩টি চালানের মাধ্যমে ৯ লাখ ২৯ হাজার ১২৮ টাকা ফেরৎ দিলেও  তারা বাকি ২৯ লাখ ৭৮ হাজার ১৭২ টাকা আত্মসাৎ করেন।

Share.