ঢাকা অফিস: ভারত থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবং মাদক, চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ করতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে রাত জেগে রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখানপুর সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসী। সীমান্তে নজরদারি জোরদার করতে গ্রামের বাসিন্দারা টর্চলাইট ও লাঠি হাতে নিয়ে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টা থেকে বাংলাদেশ সময় সকাল ছয়টা পর্যন্ত পালা করে পাহারায় থাকছেন। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এক দল আর বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত আরেক দল গ্রামবাসী যোগ দেন। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে বিজিবি। অন্যদিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সাহেবনগর সংলগ্ন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গত শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) চৌকি স্থাপন করেছে। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি পাঠানোর চেষ্টা হলেও বিএসএফ তা গ্রহণ করেনি বলে জানিয়েছে বিজিবি। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সরেজমিনে পরিদর্শনে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে বিএসএফকে। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, তারা নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে পবা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক ও গণসংযোগ করেন। যাতে করে সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক, চোরাচালান ও মানবপাচার কমে। আবার অনুপ্রবেশ ঠেকাতেও এই উদ্যোগ কাজ দেয়। এর মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করাও হয়। এতে চরখানপুর এলাকার একদল তরুণ বিজিবিকে সহায়তার কাজে অংশ নেওয়ার কথা জানান। সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি বিওপির অধীনে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার এলাকা থাকে। এই এলাকার জন্য মাত্র ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য থাকে। ফলে এই অল্প সদস্য দিয়ে পুরো এলাকা নজরদারিতে রাখা কঠিন। সেখান থেকেই বিজিবি সাধারণত সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কাজ করার চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে বিজিবি ব্যাটালিয়ন-১ এর আওতাধীন চরখানপুর সীমান্ত ফাঁড়ির নায়েক সুবেদার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ২৭ নভেম্বর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানায়, ভারত থেকে ওই সীমান্ত পথে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। আমাদের সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমার মনে হলো, যদি অনুপ্রবেশ ঘটে সেখানে অনেক লোক আসতে পারে যা বিজিবির পক্ষে সামলানো কঠিন। তাই আমি গ্রামে মানুষদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলি। তখন তারা আমাদের সহযোগিতা করতে সম্মত হয়।’ রাজশাহী ব্যাটালিয়ন বিজিবি-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বিজিবি সবসময় সীমান্তবর্তী মানুষদের সচেতন করার অংশ হিসেবে গণসংযোগ করে থাকে। তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়। যাতে করে সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালান, মাদক ব্যবসা ও মানবপাচার রোধ করা যায়। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে কিংবা ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে, মাদক, চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ করতে গ্রামবাসী বিজিবিকে সহযোগিতা করছে।’ এদিকে বিজিবি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সাহেবনগর সীমান্ত ফাঁড়ির এক কিলোমিটার পূর্ব পাশে পদ্মা নদী থেকে বের হয়ে একটি কাটা নদী উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী হয়ে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার চরলবণগোলা এলাকায় ঢুকেছে। তবে কাটা নদীর ভাঙনে সেখানকার সীমানা পিলারগুলো গত বছরই নদীতে বিলীন হয়ে যায়। সম্প্রতি কাটা নদীটিতে পানি কমে গিয়ে পশ্চিম প্রান্তে বাংলাদেশ সীমানার মধ্যে ছোট একটি চর পড়েছে। নোম্যান্সল্যান্ড সংলগ্ন চরটিতে গিয়ে কিছুদিন ধরে বিজিবি সদস্যরা টহল করতো। চরটি বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত বলে নৌকা ছাড়াই পায়ে হেঁটেই বিজিবি সেখানে যাতায়াত করতো। কিন্তু গত শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাতে বিএসএফ সদস্যরা ইঞ্জিন নৌকায় করে চরটিতে গিয়ে রাতারাতি সেখানে বাঁশের মাচা পেতে ওপরে খড় ও পাটকাঠি দিয়ে একটি অস্থায়ী চৌকি তৈরি করেন। পরদিন গত শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল থেকে ভারতের চরলবণগোলা ফাঁড়ির বিএসএফ সদস্যরা সেখানে অবস্থান ও টহল করতে শুরু করে। বিজিবি সদস্যরা গত রবিবার বাংলাদেশ সময় দিনের বেলায় একবার ও রাতের বেলা আরেকবার চরের কাছাকাছি গিয়ে চলে যাওয়ার সিগন্যাল দিলে বিএসএফ সদস্যরা চৌকি ছেড়ে পালিয়ে যায়। বাংলাদেশ সময় রাতে আবারও নৌকাযোগে বিএসএফ সদস্যরা চরে ওঠার চেষ্টা করলে খবর পেয়ে বিজিবি চরে গিয়ে অবস্থান নেয়। এরপর বিএসএফ নৌকা ঘুরিয়ে ভারতের ভেতরে চলে যায়। তবে গভীর রাতে বিএসএফ আবারও চরের অস্থায়ী চৌকিতে গিয়ে অবস্থান নেয়। সোমবার বাংলাদেশ সময় সকালে বিজিবি সেখানে গেলে বিএসএফ চর ছেড়ে পালিয়ে যায়। রাজশাহীর বিজিবি ব্যাটালিয়ন-১ অধীন ডেলটা কোম্পানির কমান্ডার নায়েব সুবেদার শওকত আলী বলেন, ‘বিএসএফ জিরো লাইনের ৭০ মিটারের ভেতরে অস্থায়ী ছাউনিটা করেছে, সেটি নোম্যান্সল্যান্ডের ওপরে। বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ বার্তা পাঠানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নোম্যান্সল্যান্ড থেকে নিজ নিজ সীমানার ১৫০ মিটার ভেতরে চৌকি করার নিয়ম। হঠাৎ গড়ে ওঠা এই চৌকিটা দেখতে পেয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফের চরলবণগোলা কোম্পানিকে চিঠি ও বিভিন্ন মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সময় সোমবার দুপুর পর্যন্ত বিএসএফ কোনও চিঠি গ্রহণ করেনি। বিষয়টি বিজিবির রাজশাহী ব্যাটালিয়ন সদর কমান্ডার ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে পরবর্তী নির্দেশনা পাওয়ার পর সেভাবেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে বিজিবি ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘সীমান্তে বিএসএফ একটি ছনের তৈরি চৌকি স্থাপন করেছে। তবে এটি শূন্যরেখার মধ্যে নাকি ভারতীয় অংশে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি সুরাহার জন্য মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় বিএসএফকে সরেজমিনে আসতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তাদের উপস্থিতিতেই বিজিবি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’
অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে রাত জেগে গ্রামবাসীর পাহারা
0
Share.