ডেস্ক রিপোর্ট: আর টিকতে পারলেন না ইমরান খান। পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে আস্থা হারিয়ে বিদায় নিতে হলো তাকে। শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। এতে ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট পড়েছে ১৭৪টি। তার বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাব পাসের জন্য দরকার ছিল ১৭২ ভোট। ইমরানের এই ক্ষমতাচ্যূতির মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীদের মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারার যে রেকর্ড সেই ধারাবাহিকতা বজায় রইল। দেশটির ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেয়াদের অর্ধেক সময়ও পার করতে পারলেন না পিটিআই নেতা ইমরান। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে দেশটির সেনাপ্রধান কামার জাভেদ সাক্ষাত করেছেন বলে খবর আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই শনিবার মধ্যরাতে দেশটির জাতীয় পরিষদে ভোটাভুটি শুরু হয়। এর আগে সকাল দশটার দিকে শুরু হওয়া অধিবেশন নানা নাটকীয়তার মধ্যে দফায় দফায় মুলতবি করা হয়। এর মধ্যে সন্ধ্যায় খবর আসে ইমরান খান রাত ৯টায় মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক ডেকেছেন। পরে শনিবার দিনগত মধ্যরাতে অধিবেশন শুরু হওয়ার স্পিকার আসাদ কায়সার পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের কারণ হিসেবে আসাদ বলেছেন, ‘ইমরানের সঙ্গে ৩০ বছরের সম্পর্ক নষ্ট করতে পারবেন না’ এবং ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রে প্রধানমন্ত্রীকে উৎখাতের ভোটে’ নেতৃত্বও দিতে পারবেন না।এরপর প্যানেল স্পিকার আয়াজ সাদিকের সভাপতিত্বে ইমরানের ভাগ্য নির্ধারণী এই ভোট শুরু হয়। মধ্যরাতে সাদিক স্পিকারের চেয়ারে আসনগ্রহণ করে দলের পক্ষে থেকে ‘সম্মানজনক প্রস্থানের’ পথ বেছে নেওয়ায় আসাদ কায়সারের প্রশংসা করেন। এর প্যানেল স্পিকার ভোটাভুটি শুরু হচ্ছে বলে ঘোষণা দেন। এসময় পার্লামেন্টের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভোট শুরু হলে প্রস্তাবের পক্ষে থাকা সদস্যদের স্পিকারের বাঁ দিকে থাকা গেট দিয়ে বের হওয়ার জন্য বলা হয়। স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে স্পিকার ফলাফল ঘোষণা করেন। ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের অধিকাংশ এমপি আগেই অধিবেশন থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। এদিন ইমরান নিজেও পার্লামেন্টে অনুপস্থিত ছিলেন। অধিবেশনের সভাপতিত্ব করায় সাদিক নিজে ভোট দিতে পারেননি। এদিকে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির আগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও সেনাপ্রধান কামার জাভেদের মধ্যে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি। প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধী জোটের অনাস্থা প্রস্তাব দেশটির সংবিধানের পঞ্চম অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে দিয়েছিলেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরি। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রী ইমরানের আহ্বানে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভী। তবে গত বৃহস্পতিবার এক আদেশে সুপ্রিম কোর্ট বলেন, পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করে শনিবারই অনাস্থা ভোট করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) শনিবার রিভিউ পিটিশন দাখিল করে। ষেখানে পিটিআই বলেছে, জাতীয় পরিষদের বিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তবে আর শেষ রক্ষা হলো না ইমরানের।