ডেস্ক রিপোর্ট: অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিড টিকা নিরাপদ বলে দাবি করেছেন ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণের সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার যোগসূত্র থাকার শঙ্কায় ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ টিকাটির ব্যবহার স্থগিত করার পর পরিপ্রেক্ষিতে দাবি করলেন যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী।এদিকে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি (ইএমএ) গতকাল মঙ্গলবার প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যার সঙ্গে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কোনো সম্পর্ক নেই।এমন পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনগণকে যখনই সুযোগ আসবে তখনই টিকাগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।যুক্তরাজ্যের জনগণকে আশ্বস্ত করতে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ব্রিটিশ ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমএইচআরএ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ইএমএ—সবাই বিশ্বাস করে যে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিরাপদ। ম্যাট হ্যানকক বলেন, ‘আমরা সব সময় এই টিকাগুলো গ্রহণের প্রভাব কী হয়, তা পর্যালোচনা করি। এবং আমরা জানি যে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্যে প্রাণ বাঁচাচ্ছে। তাই, যদি আপনার টিকা নেওয়ার ডাক পড়ে, নিয়ে নিন।’ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যবহার স্থগিত করার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের জনগণের মধ্যে টিকাগ্রহণের হার কমেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন প্রচুর মানুষ টিকা নিচ্ছেন’ এবং ‘টিকা নেওয়ার জন্য (মানুষের) ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে’।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ইউরোপ: অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিড-১৯-এর টিকা নিয়ে বেশ দ্বিধায় পড়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর নেতারা। টিকাটির ব্যবহার স্থগিত করে সমালোচনারও সম্মুখীন হচ্ছে দেশগুলো।এদিকে, ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যবহার স্থগিত ঘোষণা করলেও বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক ও ইউক্রেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যার সঙ্গে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কোনো সম্পর্ক নেই। ফ্রান্স ও ইতালি এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে।পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল হাতে না পাওয়া পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যবহার স্থগিতই রাখবে বলে জানিয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও স্পেন।ইএমএ প্রধান এমার কুক মঙ্গলবার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জরুরি বৈঠক শেষে বলেন, “আমরা ‘পাকাপোক্তভাবে নিশ্চিত’ হয়েছি, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার সঙ্গে শরীরে রক্ত জমাট বাধার কোনো সম্পর্ক নেই।” আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই বৈঠক চলবে এবং সেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে অবস্থান তুলে ধরবে ইএমএ।অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং টিকাটির প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকাও দাবি করে আসছে, রক্ত জমাট বাঁধার সঙ্গে টিকা নেওয়ার কোনো যোগসূত্র নেই। মঙ্গলবার বিশেষজ্ঞ গবেষক ও চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে এমনটি জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি যৌথ বিবৃতিতে ইএমএর প্রাথমিক বক্তব্যকে উৎসাহব্যঞ্জক বলে উল্লেখ করেছেন।অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃপক্ষও বলছে, তাদের টিকা নেওয়ার সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার কোনো সম্পর্ক নেই। বিবৃতিতে কোম্পানিটি জানিয়েছে, গোটা ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য মিলে প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ মানুষকে তাদের টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জনেরও কম মানুষের শরীরে গত সপ্তাহে রক্ত জমাট বাধার সমস্যা দেখা দিয়েছে। টিকাপ্রাপ্তদের মাঝে ১৫ জনের ডিভিটি অর্থাৎ ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা এবং ২২ জনের পালমোনারি অ্যাম্বোলিজম অর্থাৎ ফুসফুসের রক্তপ্রবাহনালীতে জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে।ডেনমার্ক, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, সাইপ্রাস, স্পেন, লাটভিয়া ও সুইডেন, নেদারল্যান্ডসসহ ১৩টি ইউরোপীয় দেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা স্থগিত করেছে।ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নতুন করে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় কড়াকড়িও আরোপ করা হচ্ছে। তাছাড়া টিকাদান কার্যক্রমে ধীরগতিও উন্নত দেশগুলোর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিবিসির হিসাব মতে, ১৩ মার্চ পর্যন্ত গোটা ইউরোপে মাত্র ১০ দশমিক ৬ শতাংশ টিকাদান সম্ভব হয়েছে যেখানে যুক্তরাজ্যে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ টিকা দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে সংশয়ে পড়েছে ইউরোপ। সব মিলিয়ে মহামারি মোকাবিলার দৌড়ে সুবিধা করতে পারছে না ইউরোপীয় জোট।দ্য গার্ডিয়ান জানায়, সংবাদ সংস্থা এএফপির হিসাব মতে, ইউরোপভুক্ত ২৮টি দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু ৯ লাখ ছাড়িয়েছে।