আট সদস্যের পরিবারের ৬ জনই করোনা আক্রান্ত

0

ঢাকা অফিস:  করোনাভাইরাস সম্পর্কে বোঝার বয়স হয়নি ১ বছরের শিশু অন্বেষা জামানের। নিয়তির নির্মমতা, এই ছোট্ট শরীরেও আঘাত হানল করোনা। মা আর দাদুর সঙ্গে তাকেও চড়তে হলো অ্যাম্বুলেন্সে। যেতে হলো প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে। অন্বেষার বাবা, দাদা ও ফুফু আগেই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নতুন করে তাদের তিনজনের শরীরে কভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ায় আট সদস্যের পরিবারে বাকি রইলেন কেবল দু’জন। কয়েক দিন আগেও সবার সঙ্গে খুনসুটিতে সময় কাটত ছোট্ট অন্বেষার। যেন হঠাৎ ঝড়ে তছনছ সাজানো বাগান। নারায়ণগঞ্জ শহরের শহীদ বাপ্পী সরণির স্থায়ী বাসিন্দা আকতার-উজ-জামান রাসেলকে দিয়ে ওই পরিবারে করোনার সংক্রমণ শুরু। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তা রাসেলের কভিড-১৯ শনাক্ত হয় ১০ এপ্রিল। দু’দিনের মাথায় আক্রান্ত তার বাবা আফসার উদ্দিন (৫৭) এবং বোন ঝর্ণা আক্তার স্মৃতি (৩০)। রাসেলের মেয়ে অন্বেষা (১), মা আঁখি বেগম (৫২) এবং স্ত্রী রাবেয়া খাতুনের (২০) করোনা শনাক্ত হয় বৃহস্পতিবার রাতে। জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হয় নতুন শনাক্ত তিনজনকে। তাদের নেওয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জে করোনায় আক্রান্তদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসেবে নির্ধারিত সাজেদা জেনারেল হাসপাতালে। পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে রাসেলের ছোট বোন আফরিন তাহরিমা (২০) ও ঝর্ণার ২ বছরের ছেলে মো. ইয়াসিনের। তারা বাসায় অবস্থান করছেন। নেগেটিভ এলেও তাদের দু’জনের শরীরে এখনও করোনার উপসর্গ রয়েছে। আফরিন জানান, কয়েক দিন আগেও আটজনের সুখী পরিবার ছিল। একে একে ছয়জনই করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে। পুরো বাসায় তারা দু’জন। ভয় আর আতংকে তাদের দিন কাটছে। ঝর্ণার স্বামী প্রবাসে অবস্থান করছেন। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না। তাদের দুই বছরের ছেলেকে আফরিনই আগলে রেখেছেন। খালামণির সঙ্গে থাকায় মায়ের শূন্যতা কিছুটা হলেও ভুলে থাকছে ইয়াসিন। জানা গেছে, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইয়াসিনের মা ঝর্ণার অবস্থা ভালো নয়। ছয় দিন ধরে চিকিৎসাধীন থাকলেও তার অবস্থার উন্নতি নেই। ডায়াবেটিস ছাড়া তার আর কোনো অসুখ ছিল না। এ ছাড়া আফসারের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তার দুটি কিডনি আগে থেকেই বিকল। তিনি সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস করে আসছিলেন। একই সঙ্গে ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত তিনি। নতুন করে আক্রান্ত রাসেলের মা-ও ডায়াবেটিসের রোগী। তবে সাজেদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাসেলের অবস্থা উন্নতির দিকে। এদিকে, সংক্রমিত পরিবারটির একাধিক ব্যক্তির শরীরে উপসর্গ দেখা দিলেও তাদের নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষায় ধীরগতি ও অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। রাসেলের ভাগ্নে মারুফ হোসেন সমকালকে জানান, তার মামার নমুনা সংগ্রহের তিন দিনেও কিছু জানায়নি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। শেষ পর্যন্ত রাসেল নিজ উদ্যোগে হাসপাতালে গিয়ে পুনরায় পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ হন। প্রায় ১০ দিন ধরে করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি ঘরে অবস্থান করেন। এই সময়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের মাঝে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। অন্বেষার জন্মদিন পালন, তারপর শুরু, ৩০ মার্চ ছিল অন্বেষার জন্মদিন। তখনও নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ায়নি। অঘোষিত লকডাউনের মধ্যে থাকলেও ঘরোয়াভাবে পালন করা হয় পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্যের জন্মদিন। সেই রাতে প্রচণ্ড জ্বর আসে অন্বেষার বাবা রাসেলের। পরদিন ফোনে পরিচিত এক চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন। কিন্তু জ্বর কমছিল না। পরিবারের কেউ করোনার বিষয়টি ভুলেও মাথায় আনেননি। ফলে প্রথম কয়েক দিন কেউ কারও থেকে আলাদা হননি।

Share.