গাজী মোঃ জামিল: আমার বাবা দেওয়ান গাজী আব্দুল ওয়াদুদ। বাবার কথা মনে পড়তেই বাবার জীবনের হাজারো স্মৃতি মনে পড়ে। উনার বহুমাত্রিক জীবন অবলোকন করলে দেখতে পাওয়া যাবে যে- আমার বাবা দেওয়ান গাজী আব্দুল ওয়াদুদ সত্যিই একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, পরোপকারী এবং একজন দায়িত্বশীল ব্যাক্তি ছিলেন। বাবা ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরী থেকে ২০০৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। বাবা সবসময়ই আবিস্কারের পক্ষে ছিলেন, জানার প্রতি আগ্রহ ছিল বাবার। বাবা সবসময় বলতেন “বেশী বেশী জানতে হবে, শুনতে হবে, শিখতে হবে তবেই তো তুমি কিছু করতে পারবে”। বাবা মনে করতেন অবসরের সময়টা নষ্ট করা মানেই বোকামি। তাই বাবা অবসর গ্রহণ করলেও তিনি তার অবসরের সময়টা নষ্ট করেনি। তিনি তার অবসরের সময়টা দিয়েছে কখনো মাকে, কখনো কখনো আমাদের ভাই-বোনদের, কখনো কোন কাজে অথবা আত্মীয় স্বজনদের। এখানে বলে নিতে হয়, বাবার অনেক স্মৃতি আমাকে ভাবায়, কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায়, কখনো কখনো সন্তান হিসেবে গর্বিতবোধ করি। লিখতে বসে বাবার একটি উপকারী ঘটনার কথা মনে পরে গেল, বাবা উনার চাকুরী জীবনে থেকেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ এবং বিশ্বাস ছিল বেশী। আর সেই আগ্রহ এবং বিশ্বাস থেকেই বাবা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। বাবাকে দেখতাম হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বড় বড় বই কিনে নিয়ে আসতেন মাঝে মাঝে আমাদের বড় ভাইও বাবার জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার বই কিনে নিয়ে আসতেন। সেই বইগুলো বাবা মনোযোগসহকারে পড়তেন। মাঝে মাঝে দেখতাম পরিবারের কেউ ছোটকাটো অসুস্থ হলে বাবা নিজেই ঔষধ কিনে নিয়ে আসতেন এবং সেই ঔষধ খেয়ে যিনি অসুস্থ ছিলেন তিনি সুস্থ্য হয়ে যেতেন। বাবার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার একটি ঘটনার কথা আমার প্রায়ই মনে পরে, বাবা অবসর গ্রহনের পরে কথা, সেই সময়কায় আমরা লন্ডনী রোড এলাকায় থাকতাম। সেই সুবাদে সেখানে পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে আমাদের ছিল সুসম্পর্ক। পাশের বাসার এক খালা ছিলেন তিনি প্রায়ই উনার মেয়েরে নিয়ে মায়ের সাথে গল্প গুজব করতে আসতেন। খালা বাবাকে ভাই বলেই ডাকতেন। হঠাৎ একদিন বাবা লক্ষ্য করলেন যে পাশের বাসার খালার মেয়েটির সারা শরীরে বসন্তের গোটার মত গুটি গুটি দানা ফোটে আছে।মেয়েটি প্রথম যখন আমাদের বাসায় আসতো তখন এমন ছিল না। বাবা আগেই ধারণা করেছিলেন কোন ডাক্তারের ভূল চিকিৎসার কারণেই মেয়েটির সমস্ত গায়ে বসন্ত রোগীর মত গুটি গুটি দানা দৃশ্যমান হয়েছে। বাবা খালার সাথে আলাপ করে তার বিস্তারিত কারণ জানতে পারলেন। এবং খালাকে বাবা বললেন উনি যেন উনার মেয়েকে চিকিৎসার অনুমতি দেন। খালাও বাবার কথা মতো পরের দিন উনি উনার মেয়ের চিকিৎসা করার অনুমতি বাবাকে দিলেন। বাবাও শুরু করে দিলেন উনি উনার রোগীর চিকিৎসা। আল্লাহর কি রহমত বাবার দেওয়া চিকিৎসায় মেয়েটি প্রায় ২০- ২৫ দিনের ভিতরে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ্য হয়ে যায়। বর্তমানে মেয়েটি স্বামী-সংসার নিয়ে কানাডা আছে। বাবা আমাকে প্রায়শই বলতেন- ‘ তুমি যদি প্রকৃতির বিরুদ্ধে চল তবে প্রকৃতি তোমার বিরুদ্ধাচরণ করবে ‘। এরকম অনেক কথা বলতেন বাবা আমাকে। বাবার একথাগুলি আমার অন্তরে যেন গাঁথা হয়ে আছে। বাবার সেকথাগুলি আজও শিহরণ দিয়ে যায় আমার মনে, আমার অন্তরে। বাবা তুমি ভাল থেকো এ শুধু আমার কামনা এবং প্রার্থনা মহান আল্লাহর দরবারে।
বিঃদ্রঃ আমার বাবা “দেওয়ান গাজী আব্দুল ওয়াদুদ” কে নিয়ে লেখা স্মৃতিচারণের ২য় পর্ব (চলবে…)