ডেস্ক রিপোর্ট: পিটার গোফিন কাজ করেন বিবিসিতে। অল্প বয়স থেকেই তিনি ভুগেছেন জীবাণু-ভীতি আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার বাতিকে। তবে তার এই শুচিবায়ু নিয়ন্ত্রণের রাখতে শিখেছেন তিনি।তিনি বলেন, ‘রান্নাঘরের মেঝেতে বসে জীবাণুনাশক দিয়ে একটা খাবারের প্যাকেট পরিষ্কার করতে করতে আমার হঠাৎ এই উপলব্ধি হলো যে আমি প্রায় ২০ বছর ধরে এই মহামারির জন্য তৈরি হচ্ছিলাম।‘পিটার যখন মাত্র শৈশবে পা দিয়েছেন – সে সময়ই তার শুচিবায়ু অর্থাৎ ডাক্তারি ভাষায় যাকে বলে অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার বা ওসিডি ধরা পড়ে।জীবনের প্রায় দু-তৃতীয়াংশ সময় ধরে তিনি জীবাণু, কিভাবে তা ছড়ায়, আর কিভাবে তাকে ঠেকানো যায় – এসব চিন্তায় আচ্ছন্ন থেকেছেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেবার পর পিটার যেসব সাবধানতা মানসিক সমস্যার কারণে পালন করতেন – ঠিক সেগুলোই সবাইকে পালন করতে বলা হচ্ছে।বাড়ির কারো সঙ্গে যেন তার ছোঁয়া না লাগে সে বিষয়ে তিনি সজাগ থাকতেন, অন্যদের ছোঁয়া যে কোন কিছু স্পর্শ করলেই হাত ধোয়া, সুপারমার্কেট থেকে কিছু কিনে আনার পরই বাড়িতে তাকে জীবাণুমুক্ত করা – এই সবই করেছেন পিটার।করোনা মহামারির আগে পিটার নিজেকে যেসব প্রশ্ন করতো এখন হয়তো নিজেদেরকে করছে পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ লোক।‘দোকানের ওই লোকটা কি আমার খুব বেশি কাছে চলে এসেছিল?’‘আমি কি যথেষ্ট দীর্ঘ সময় ধরে হাত ধুয়েছি?’‘যে সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছি – সেটাতে কি জীবাণু মরবে?’একেই বলে সন্দেহ-বাতিক, যাকে উনবিংশ শতাব্দীর ফরাসী ডাক্তাররা নাম দিয়েছিলেন la folie du doute বা সন্দেহ থেকে তৈরি হওয়া পাগলামি – পিটারের মতে শুচিবায়ুর সেরা সংজ্ঞা।পিটার বলেন, ‘আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে আমরা যদি লকডাউনের নিয়ম মেনে চলি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি, হাত ধুই, তাহলে ভাইরাসের হাত থেকে নিজকে রক্ষা করতে পারবো। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে আসে মনের কোণায় খচখচ করতে থাকা সেই দুশ্চিন্তা, সন্দেহ। এরকম চিন্তা মনে এলেই যে তা খারাপ তা নয়। এটা আপনাকে বরং সবসময় সজাগ-সচেতন রাখতে পারে।’কিন্তু সন্দেহের মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং করোনাভাইরাস বিস্তারের সময় অনেকের মনেই জীবাণুভীতি থেকে নিজেকে পরিষ্কার রাখার বাতিক তৈরি হতে পারে বলেও জানান তিনি।পিটার বলেন, ‘আমি বড় হয়েছি কানাডায়। বয়স ১২ পেরুনোর পর আমার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ শুরু হয়। বিশেষ অন্য কেউ কথা বলার সময় থুথু ছিটকালে বা তারা টয়লেট ব্যবহার পর হাত না ধুয়ে থাকলে কী বিপজ্জনক জীবাণু ছড়াবে – এ চিন্তা আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখতো।’তিনি বলেন, ‘আমি দরজার হাতল, লাইটের সুইচে হাত দিতে চাইতাম না। হাত পরিষ্কার করতে করতে তা লাল হযে যেতো। আমার পরিবার একসময় ব্যাপারটা খেয়াল করলো, তবে তারা আমার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন।’পিটারের চিকিৎসা হয়েছে, তিনি এখনো এন্টি-ডিপ্রেসেন্ট ওষুধ খান। তবে এই চিকিৎসা আর শুচিবায়ু তার স্বাভাবিক জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছিল।তিনি বলেন, ‘হাইস্কুল আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমি পড়াশোনার চেয়ে সারা দিনের জীবাণু পরিষ্কার নিয়েই বেশি চিন্তিত থাকতাম। কোন কোন দিন সারা রাত ধরে কাপড় ধোয়া, তিন বার গোসল করা – এসব করেছি। তাছাড়া আমার বন্ধুরা ব্যাপারটা বুঝে ফেললো কিনা এটাও ছিল একটা দুশ্চিন্তুা।’তবে গত পাঁচ বছরে এই শুচিবায়ুকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছেন পিটার।তিনি বলেন,‘তবে করোনাভাইরাস বিস্তারের মধ্যে আমার মাথায় এ চিন্তাটা জোরদার হয়েছে যে কত সহজে এই জীবাণু একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে।’তিনি আরো বলেন, ‘ফলে এখন আমার মধ্যে ১০ বছর আগেকার সেই চরম সাবধানতা আবার ফিরে এসেছে। আমি দোকান থেকে কেনা খাবারের প্যাকেট পরিষ্কার করি, অন্য সবকিছু তরল সাবান আর পানি দিয়ে পরিষ্কার করি। আবার হাত ধুই। এগুলো আমার নতুন অভ্যাস নয়, বরং সেই সব পুরোনো অভ্যাস যা আমি কাটিয়ে উঠেছি বলে ভাবতাম।’এখন লকডাউন শিথিল করার কথা হচ্ছে। কিন্তু দোকানপাট-অফিস-স্কুল খুললেও কোভিড-১৯এর ভয় পৃথিবীতে আরো অনেক দিন রয়ে যাবে।
আমি ২০ বছর ধরে করোনাভাইরাস মহামারির জন্য তৈরি
0
Share.