ঢাকা অফিস: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে সরাতে না পারলে দেশ আরও সংকটে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আমাদের প্রধান টার্গেট হলো এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরানো। এরপর একটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তা না হলে ক্ষমতাসীনদের দুর্বৃত্তায়ন থামবে না। সেই লক্ষ্যে আমরা বিভেদ ভুলে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে একই প্ল্যাটফর্মে আসা তথা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের কথা বলছি। শনিবার সকালে সাবেক মন্ত্রী মরহুম মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়ার ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক ভার্চুয়াল স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।’কোভিড পরবর্তী নতুন বিশ্বব্যবস্থায় বাংলাদেশের রাজনীতিক অর্থনীতি ও বিশ্ব পরিস্থিতির নিরিখে নির্বাচনী গ্রহণযোগ্যতা কর্তৃত্ববাদী সরকারী অবস্থান’ শীর্ষক এই স্মারক আলোচনা সভার আয়োজন করে মশিয়ূর রহমান যাদু মিয়া মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিগত ১৪-১৫ বছরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। সেটা হলো যারা এই দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন তারা দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। তারা ভিন্নমতের মানুষদের দলন করছে। মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। লেখার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। তার কারণ হলো জনগণের কাছে এই সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। আজকে প্রতিনিয়ত মানুষের অধিকার খর্ব হচ্ছে। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। কিন্তু দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই। বরং তারা মিথ্যা তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে দেশের মানুষকে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত করছে। আওয়ামী দুঃশাসনের পরিস্থিতিকে ৭১ সালের পাকিস্তানের চেয়েও খারাপ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি ৭১ সালের চেয়েও খারাপ। কারণ সেসময় পাকিস্তানিরা ঘোষণা দিয়ে আমাদের সাথে যুদ্ধ করতো। কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগ ঘোষণা ছাড়াই জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা মানুষকে নিপীড়ন করছে। ফখরুল বলেন, এমতাবস্থায় আমাদের মূল টার্গেট হলো সরকারকে সরানো। তা না হলে তাদের দুর্বৃত্তায়ন থামবে না। সেই লক্ষ্যেই আমরা সকল রাজনৈতিক দলকে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি। যেভাবে ৬৯, ৭১ এবং ৮৯ সালে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। সেভাবেই আবারো ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন তৈরি করতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেশে গণতন্ত্র নেই, কথা বলা ও লেখার স্বাধীনতা নেই। নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার হতে হবে। প্রবাসে যারা রয়েছেন তাদেরকেও সোচ্চার হয়ে কথা বলতে হবে। তিনি বলেন, এই সরকার আগে একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করেছে। এখন তারা ফের একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। যা আরো ভয়াবহ এবং মারাত্মক। এই নীতিমালার ফলে তারা আমাদের কথা বলা বন্ধ করতে চায়। সুতরাং ভার্চুয়াল সভা বা কথা বলাও তারা বন্ধ করতে চাইছে। মরহুম যাদু মিয়ার স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মশিউর রহমান যাদু মিয়া তার দল ন্যাপ-ভাসানী বিলুপ্ত করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করতে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। পরবর্তীতে দেশের আর্থ-সামাজিক, ভূ-রাজনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছেন। সেই থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্ত ভিত রচিত হয়। আজ যার সুফল ভোগ করছেন দেশের কোটি কোটি মানুষ। আজকের এই মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে মরহুম যাদু মিয়ার স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।স্মারক বক্তা ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, মানবসমাজ চিরকাল একরকম থাকে না। সেটা পরিবর্তনশীল। তেমনই আজকে মহামারি করোনা পরবর্তী বিশ্বে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটছে। দেশের পরিবর্তন সাধনে মরহুম মশিউর রহমান যাদু মিয়ার অবদান অনস্বীকার্য। আজকে আমাদেরকে কথা বলতে হয় মেপে মেপে। কথা বলতে চিন্তা ভাবনা করতে হয়। সুতরাং দেশের চলমান সংকটময় পরিস্থিতি উত্তরণে এবং কোভিড পরবর্তী বিশ্বে আবারো সকল রাজনৈতিক দল ও মতের ঐক্য দরকার। আমেরিকার স্টেইট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের শিক্ষক মোহাম্মদ ইমরান আনসারীর পরিচালনায় সভায় ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, কানাডার ডউসন কলেজের শিক্ষক ড. আবিদ বাহার, শিক্ষাবিদ ড. তাজ হাসমী, মরহুমর যাদু মিয়ার কন্যা রিটা রহমান প্রমুখ। এছাড়াও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক প্রমুখ ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।