ঢাকা অফিস: ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) হাজি মো. সেলিমের ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিম সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ইরফান সেলিমের কর্মকাণ্ড স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ধারা ২ (৩৭) এবং ১৩ (১) (খ) (ঘ) অনুযায়ী নৈতিক স্খলন অপরাধ এবং অসদাচরণের শামিল। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ধারা ১২ এর উপধারা (১) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলরের পদ থেকে তাঁতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে সই করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব আ. ন. ম ফয়জুল হক। এর আগে অবৈধ ওয়াকিটকি রাখা ও ব্যবহার এবং বিদেশি মদ রাখা ও সেবনের দায়ে গতকাল মোহাম্মদ ইরফান সেলিম ও তাঁর দেহরক্ষী মো. জাহিদকে এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ সকালে এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ইরফান সেলিমকে সাময়িক বরখাস্ত করাসহ তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তিনি যত বড় ক্ষমতার অধিকারী হোন না কেনো। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এনটিভি অনলাইনকে মন্ত্রী জানান, আগেও এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সরকার বরাবরই আইনের শাসনে বিশ্বাসী। সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সব কিছুই করব। গত রোববার রাতে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খানকে মারধর ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম, এ বি সিদ্দিক দিপু, মো. জাহিদ ও মিজানুর রহমানের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো দুই-তিনজনকে আসামি করে ধানমণ্ডি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন ওয়াসিফ আহমদ খান। মামলার পর গতকাল দুপুর থেকে র্যাব সদস্যরা রাজধানীর চকবাজারের ২৬ দেবীদাস ঘাট লেনে ‘চাঁন সরদার দাদা বাড়ী’তে অভিযান চালায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। অভিযান শেষে অবৈধ ওয়াকিটকি ও মাদক রাখার দায়ে ইরফান সেলিম ও তাঁর দেহরক্ষী মো. জাহিদকে এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর রাতে দুজনকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল সন্ধ্যায় র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, ইরফান সেলিমের কক্ষ থেকে লাইসেন্সবিহীন বিদেশি অস্ত্র, একটি একনলা বন্দুক, একটি ব্রিফকেস, মদ ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া দেহরক্ষী মো. জাহিদের কাছ থেকে ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের ৩৮ থেকে ৪০টি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে থাকে।’ আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘এ ছাড়া আমরা তাঁদের কাছ থেকে গুলি, হাতকড়া, একটি ড্রোন এবং কন্ট্রোল রুম থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি ভেরি হাই সিকিউরিটি সেট (ভিএইচএস) উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এটা ওয়াকিটকির একটি আধুনিক সংস্করণ। এ ছাড়া ওই বাসায় টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। টর্চার সেলে হাড়, ছুরি, হকস্টিক ও দড়ি পাওয়া যায়।’ আজ একই মামলায় ইরফানের সহযোগী আসামি দিপুকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ডিএমপির রমনা গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল টাঙ্গাইল থেকে দিপুকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে একই মামলায় মোহাম্মদ ইরফান সেলিমের গাড়িচালক মো. মিজানুর রহমানকে একদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
ইরফান সেলিমকে কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত
0
Share.