ঢাকা অফিস: বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কারণে ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কের রাস্তার বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ আর নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখায় যানজট লেগেই থাকে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় রাজধানীমুখী ২২ জেলার মানুষ বছরের পর বছর ধরে নরকযন্ত্রণা ভোগ করে আসছে। এবারও ঈদযাত্রায় যানবাহনের বাড়তি চাপে এই রুটের যাত্রীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও চালকরা। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যানজট নিরসনে গৃহীত দ্রুতগতির পৃথক বাস লেন বা বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। শুরুতে নির্মাণ ব্যয় ছিল ২ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। ধীরগতির কারণে ব্যয় ও মেয়াদ দুই-ই বাড়ে। দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। বর্ধিত মেয়াদের শেষ প্রান্তে চলে এলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি প্রায় ৭৫ শতাংশ। ঢাকা বিআরটি কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে গাজীপুর, টঙ্গী ও উত্তরা এলাকার মধ্যে দ্রুত, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। বিআরটির দুদিক থেকে প্রতি ঘণ্টায় ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে সক্ষম হবে। প্রকল্পের আওতায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেডসহ ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার বিআরটি লেন, ১০ লেন বিশিষ্ট টঙ্গী সেতু পুনর্নির্মাণ, সাতটি ফ্লাইওভার, একটি বাস টার্মিনাল, ১১৩টি সংযোগ সড়ক উন্নয়ন, ২৪ কিলোমিটার উচ্চক্ষমতার ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। এদিকে বছরের পর বছর ধরে চলা ধীরগতির বিআরটি প্রকল্পের কারণে এ পথের যাত্রীরদের দুর্ভোগ আর ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। যদিও গত কয়েক মাসে উত্তরা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার দৃশ্যপটে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু যাত্রীরা বলছেন, অপরিকল্পিত কাজের কারণে তাদের দুর্ভোগ কয়েক গুণ বেড়েছে। এই রুটে নিয়মিত চলাচল করা যাত্রীরা বলছেন, এ কাজগুলো অতি দ্রুত সম্পন্ন হলে সবার জন্য ভালো। ম্যানেজমেন্ট লেভেলে যারা কাজ করে তারা যদি সিস্টেমেটিকভাবে কাজটা করতেন, তাহলে সাধারণ মানুষের এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না। এই মহাসড়ক এখন অসংখ্য খানাখন্দে ভর্তি। যাত্রীদের নিত্য দুর্ভোগের সাথে সাথে আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীরাও প্রতিনিয়ত বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। চালকরা জানান, অস্বাভাবিক যানজটের কারণে গাজীপুর থেকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড যেতেই ঘণ্টা ছয়েক পার হয়ে যায়। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ৫-৬ ঘণ্টা লাগে মহাখালী পর্যন্ত যেতে। বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলায় এই মহাসড়কের টঙ্গী সেতু থেকে জয়দেবপুর চান্দনা চৌরাস্তার ১২ কিলোমিটার যেতে দুই থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। এ বিষয়ে বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, টঙ্গী ব্রিজ থেকে টঙ্গী সরকারি কলেজ এই তিন কিলোমিটার বাদে অন্য কোথাও যাতায়াতে তেমন কষ্ট হবে না। অন্যান্য এলাকায় বিকল্প নতুন রাস্তা নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। দুটি এলাকায় মাত্র এক কিলোমিটার শুধু কার্পেটিং বাকি। এটা হলে মানুষের যাতায়াতে কোনো সমস্যা থাকবে না। ঈদের বাড়তি চাপ সামল দিতে একসঙ্গে সব পোশাক কারখানার পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়ার আহ্বান ট্রাফিক বিভাগের। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ডিসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অঞ্চলভেদে গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য যদি রিজার্ভ বাস করা যায়, তাহলে তারা একটা গার্মেন্টস থেকে তিন-চারটা বাসে করে যেতে পারবে। তাহলে ২০ লাখ শ্রমিক একই সময়ে রাস্তায় আসবেন না, প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবেন না। ঈদের ছুটিতে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এই সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে আগাম প্রস্তুতি না নিলে ঈদে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেন নগরবিদরা।
ঈদযাত্রায় ভয়াবহ যানজটের শঙ্কা
0
Share.