‘একজন মহিলা ফাঁসাই দিছে, আমারে ছাইড়া দেন’:মজনু

0

ঢাকা অফিস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি মজনুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয় রায়ে।  আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার সপ্তম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে মজনুকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মজনু আদালত চত্বরে অস্বাভাবিক আচরণ করেন এবং পরে কাঠগড়ায় থাকা অবস্থায় পুলিশ সদস্যকে মারধর করেন বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। আদালতে হাজিরের পর মজনু পুলিশ-আইনজীবী ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘আমি এতিম অসহায়। আমার পক্ষে কেউ নাই। আমারে ছাইড়া দেন, আমি বাড়ি চলে যাব। আমি জখম করিনি। আমি ধর্ষণ করিনি, ধর্ষণ করেছে চারজন লোক। আমি তাদের চিনি। আমাকে পিটাইয়া হাতের আঙ্গুল ভেঙে ফেলছে। পুলিশ আমাকে মাইরা টিপসই নিয়ে গেছে। আমারে এক বছর আটকাই রাখছে। জেলে মশার কামড় খাইয়া থাকতে পারছি না। আমারে শুধু কচুর ডাল খাওয়ায়। আমারে ছেড়ে দেন।’ কান্নারত অবস্থায় মজনু বলতে থাকেন, ‘একজন মহিলা আমাকে ফাঁসাই দিছে। ধর্ষণ করেছে চারজন লোক। তাদের গ্রেপ্তার না করে আমাকে ধরে নিয়ে আসছে। আমার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে, আমি রাষ্ট্রপতির কাছে বিচার দিমু। আমারে মারলে আল্লাহ তার বিচার করবে। পুলিশ ঘুষ খাইয়া আমাকে ফাঁসাইছে। আমারে ছাইড়া দেন, না হয় আমি এহান থেকে লাফ দিয়া মইরা যামু।’এরপর মজনুকে এজলাস কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অবস্থায় তিনি পুলিশকে মারধর করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কাঠগড়ায় তোলার পর পরই মজনু সেখানে দায়িত্বরত উপপরিদর্শক (এসআই) নৃপেনের ওপর হামলা চালান। মজনু এসআইয়ের গলা চেপে ধরে কিল-ঘুষি মারেন। তখন অন্য পুলিশ সদস্যরা এসে এসআই নৃপেনকে সরিয়ে নেন। এ ছাড়া মজনু সেখানে দায়িত্বরত অন্য পুলিশ সদস্যদের গালাগালি করেন। তখন আদালত কক্ষের মধ্যে একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়।     আলোচিত এই মামলায় ২৪ সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। মাত্র ১৩ কার্যদিবসে মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এর আগে গত ১৬ মার্চ মজনুকে একমাত্র আসামি করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক আবু সিদ্দিক। সে অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, গত ৪ জানুয়ারি ওই ছাত্রী বান্ধবীর দাওয়াতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষণিকা বাসে করে তাঁর বান্ধবীর বাসা শেওড়ার উদ্দেশে রওনা হন। সেদিন সন্ধ্যা ৭টায় ছাত্রী শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে না নেমে কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নেমে যান। সে সময় ছাত্রী বুঝতে পারেন, তিনি ভুল করে নেমে পড়েছেন। ভুল বুঝতে পেরে তিনি ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে থাকেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মজনু ভবঘুরে প্রকৃতির লোক। ঢাকা শহরে তাঁর কোনো স্থায়ী বাসা নেই। ঘটনার দিন মজনু বিকেল ৫টায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যান। ওষুধ নিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু পূর্বদিকে যাওয়ার রাস্তার ফুটপাতের পাশে ইটের তৈরি বেঞ্চে বসে থাকেন। সন্ধ্যা ৭টায় ছাত্রী ওই ফুটপাত দিয়ে যাচ্ছিলেন। মজনু পেছন দিক থেকে হঠাৎ তাঁকে পাশের ঝোপের ভেতরে ফেলে দেন। তখন ছাত্রী চিৎকার করতে থাকলে মজনু গলা চেপে ধরেন এবং মুখে, বুকে ও পেটে কিল ঘুষি মারেন।অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে, আসামি মজনু ছাত্রীর গলা চেপে ধরায় তিনি নিস্তেজ হয়ে যান। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তখন মজনু তাঁকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পরে মজনু ছাত্রীর ব্যাগ থেকে একটি প্যান্ট বের করে তাঁকে পরিয়ে দেন। ছাত্রী জ্ঞান ফেরার পরে দেখেন তাঁর পরনে যে প্যান্ট ছিল সেটা আর নেই। ছাত্রী তখন চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে মজনু টাকা, মোবাইল ফোন ও ব্যাগ ছিনতাইয়ের জন্য গলা চেপে ধরে এবং কিল-ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মজনু ছাত্রীর কাছ থেকে দুই হাজার টাকা, মোবাইল ফোন ও ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। এরপর ছাত্রী দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে একটি রিকশায় ওঠেন এবং তাঁর বান্ধবীর বাসায় যান। বান্ধবীকে বিষয়টি জানালে ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়।অভিযোগপত্রে বলা হয়, এরপর ধর্ষণের শিকার ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। ঘটনাস্থলে পাওয়া আলামত, ছাত্রীর পরা প্যান্ট, ছাত্রী ও আসামির নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চিফ ডিএনএ অ্যানালিস্টের কাছে পাঠানো হয়। পর্যালোচনায় দেখা যায়, মজনু ও ছাত্রীর ডিএনএ উপস্থিত আছে। যাতে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয় যে আসামি মজনু ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন।

Share.