ঢাকা অফিস: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড অনেকগুলো ঘটনার সমষ্টি। একটিমাত্র কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনই বলা যাবে না। ঘটনার মোটিভ সম্পর্কে জানতে আমাদের আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় রাজধানীতে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া স্ট্যাটাস বা শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে কিনা। এর জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি অনেকগুলো ঘটনার কারণের মধ্যে একটি কারণ হতে পারে। এটিই একমাত্র কারণ কিনা, তা এখনই বলা যাবে না। আরও কারণ থাকতে পারে। মনিরুল ইসলাম বলেন, এজাহার দায়েরের আগেই পুলিশ সদস্যরা তৎপরতা শুরু করেন। এ কারণে মামলার এজাহার দায়েরের আগে আমরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১০ জনকে আটক করতে সক্ষম হই। এজাহার দায়েরের পরে আমরা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। খুবই দ্রুততার সঙ্গে আরও ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি জানান, এজাহারে নাম নেই, কিন্তু পরে তদন্তকালে অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আরও ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজও (বৃহস্পতিবার) ডিবির একাধিক টিম দুজনকে গ্রেফতার করেছে। এজহারবহির্ভূত গ্রেফতার ৩ জন হলো অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ও শামসুল আরেফীন রাফা। অমিত সাহার ব্যাপারে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, একজন মানুষ ঘটনাস্থলে থেকেও ঘটনা সংগঠিত করতে পারে, আবার দেখা যায় ঘটনাস্থলে না থেকেও করতে পারে। প্রাথমিক তদন্তে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, অমিত সাহা ঘটনাস্থলে ছিল না। তবে এই ঘটনায় তার দায়-দায়িত্ব রয়েছে। প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ দায়-দায়িত্ব রয়েছে, সে কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি ব্যবস্থা করার ব্যাপারে পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে বলে দাবি করেন তিনি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে কারো কাছে কোনও তথ্য থাকলে তা ডিবি পুলিশকে দিয়ে সহায়তা করার আহ্বানও জানান তিনি। টর্চার রুমে কার কী ভূমিকা ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পরই বলতে পারবো। রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা একটা ক্লিয়ার পিকচার নেওয়ার চেষ্টা করছি। পুরোপুরি ক্লিয়ার পিকচার পেতে আমাদের আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। তিনি জানান, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাইছে। তাদের দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে তদন্তকাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের মোটিভ কী ছিল জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মোটিভ খুঁজে বের করাটা আমাদেরও তদন্তের মূল বিষয়। তাকে তি হত্যার উদ্দেশ্যে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, নাকি অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল— সেটা আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষ করার আগে আমরা মোটিভ সম্পর্কে এখনই কিছু বলতে চাইছি না। আমরা প্রাথমিকভাবে যা জেনেছি তা হলো অনেকগুলো ঘটনার সমষ্টি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর টহল পুলিশের কী ভূমিকা ছিল জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, হলের ভেতর কাউকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে— এরকম কোনও তথ্য পুলিশের কাছে ছিল না। ইউনিভার্সিটিতে একটা রেওয়াজ রয়েছে। টহল পুলিশ অপেক্ষা করার পর ভেতর থেকে জানানো হয়েছে, ভেতরে কোনও সমস্যা নেই। তিনি বলেন, ভেতরে কী নৃশংস ঘটনা ঘটছে- এ বিষয়ে আমাদের জানা থাকলে পুলিশের ওইখানে কী শক্তি ছিল বা তাদের ভেতরে ঢোকার মতো ক্যাপাসিটি ছিল কিনা, সেটা না; জানতে পারলে আমরা সবাই সেখানে যেতাম। অতীতেও আমরা এভাবে ভেতরে প্রবেশ করছি। আবরার হত্যার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা জানলে হয়তো এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতো না। পুলিশের আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের কোনও ঘাটতি ছিল না দাবি করে তিনি বলেন, ভেতরে একটা ঘটনা ঘটছে, সেটা জানা থাকলে আমরা রেওয়াজ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের পারমিশন নেওয়ার অপেক্ষা করতাম না। কোনও মেসেজ পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, কেউ একজন পুলিশকে জানিয়েছে ভেতর একটি গোলমাল হচ্ছে। সেই মেসেজে টহল পুলিশ গিয়েছিল। কিন্তু হলের বাইরে থেকে ভেতরে কী হয়েছে তা বোঝা যায়নি। পুলিশের আন্তরিকতার কোনও ঘাটতি ছিল না বলে আবারও দাবি করেন মনিরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে থাকা অতিরিক্ত কমিশার (ডিবি) আব্দুল বাতেন বলেন, ৩০-৪০ মিনিট পুলিশ অপেক্ষা করার পর ছাত্ররাই বলেছেন, ভেতরে কোনও সমস্যা নেই।
একটিমাত্র কারণে আবরার-কে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনই বলা যাবে না: মনিরুল ইসলাম
0
Share.