ঢাকা অফিস: ‘আমার ৩ ছেলে, ১ মেয়ে। একমাত্র মেয়ে ইশরাত জাহান তুষ্টি আমার খুব আদরের ছিলো। ওর মুখে সবসময়ই হাসি ফুটিয়ে রাখার চেষ্টা ছিলো আমার। মেয়েটাও আমার জন্য অনেক পাগল ছিলো, বাবা-বাবা বলে জীবনটা দিয়ে দিতো। ছোটবেলা থেকেই মেয়েটার একটু শ্বাসকষ্ট ছিল। মেধাবী হওয়ায় পড়াশোনায় অনেক ভালো ছিলো, যে কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ চেষ্টায় ভর্তির সুযোগ পায় সে। অথচ, জীবনের শুরুর দিকেই অকালে ঝরে গেলো আমার কলিজার টুকরা মেয়েটা।’- আজ রোববার (৬ জুন) সকালে ঢাকার আজিমপুরে স্টাফ কোয়ার্টারে মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর দুপুরে দিকে এভাবেই শোক প্রকাশ করছিলেন বাবা আলতাফ উদ্দীন।আজিমপুর স্টাফ কোয়ার্টারের ১৮ নম্বর ভবনের নিচ তলায় ইশরাত জাহান তুষ্টি (২১) নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ সময় বাথরুমে থাকায় তুষ্টির রুমমেট ও বন্ধুরা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। আজ রোববার ভোরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাসাটির বাথরুম থেকে তুষ্টিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, ইশরাতের বাবা কৃষিকাজের পাশাপাশি ব্যবসা করেন। নেত্রকোনা থেকে মোবাইল ফোনে গণমাধ্যমকে তিনি জানান, তুষ্টি ওই বাসায় মাত্র ৩ থেকে ৪ দিন আগে উঠেছিলেন। ফোন করে জানিয়েছিলেন, বাসাটা খুব সুন্দর। আগের বাসার চেয়ে ১০০ টাকা বেশি ভাড়া দিতে হবে। সবাই মিলে সুখ-শান্তিতে আছেন। আলতাফ উদ্দীন তখন হেসে মেয়েকে বলেছিলেন, টাকা যা লাগে লাগুক, মেয়ের পছন্দ হয়েছে, এটাই বড় কথা।আলতাফ উদ্দীন জানান, ‘মেয়ের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই মোবাইল ফোনে কথা হতো। গতকাল শনিবার (৫ জুন) এক আত্মীয়ের বিয়ে ছিল বলে মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। এই আফসোস যাচ্ছে না আলতাফ উদ্দীনের। মেয়ে কীভাবে মারা গেলেন, তা নিশ্চিত নন এই বাবা। তবে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন- ‘মেয়েকে আল্লাহ নিয়ে গেছেন বলে।’শরীর খারাপ থাকায় আলতাফ উদ্দীন ঢাকায় আসতে পারেননি। মেয়ের লাশ নিতে অন্য আত্মীয়রা ঢাকায় এসেছেন। গ্রামের বাড়িতে মেয়ের মরদেহের অপেক্ষায় আছেন বাবা।তুষ্টির মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (২০১৮-১৯) শিক্ষার্থী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে সংযুক্ত ছিলেন তিনি। হল বন্ধ থাকায় তুষ্টি ও তার এক বান্ধবী আজিমপুর স্টাফ কোয়ার্টারে ভাড়া থাকছিলেন।