এক প্রতিষ্ঠানের ৩৯ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি, মামলা

0

 ঢাকা অফিস: একটি টাইলস বিপননী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রায় ৩৯ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে। সোমবার (৫ জুলাই) প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।মোহাম্মদ ট্রেডিং নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের জসিম উদদীন এভিনিউয়ের আরএকে টাওয়ারের ৭ম তলায় অবস্থিত। যার (মূসক নিবন্ধন নং: ০০১০৭৩৩৩৭-০১০২)।প্রতিষ্ঠানটি আরএকে সিরামিকস বাংলাদেশ লিমিটেড এবং স্টার সিরামিক লিমিটেডের কাছ থেকে বিভিন্ন আকৃতির টাইলস এবং স্যানিটারি আইটেম ক্রয়পূর্বক তা স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করে থাকে।ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়, প্রতিষ্ঠানটি তাদের ভ্যাটযোগ্য সেবার বিপরীতে প্রযোজ্য রাজস্ব যথাযথ ভাবে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করেনি। উল্টো সঠিক বিক্রয় তথ্য গোপন করে ঘোষণাবহির্ভূত স্থানে মূসক সংক্রান্ত দলিলাদি সংরক্ষণ করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে নিজেরা ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হয়েছে এবং সরকারের আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছে।এরপরই ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল গত ৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন বহির্ভূত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। এতে অভিযোগটির সত্যতা পায় তারা। এতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট সংক্রান্ত মূল দলিলপত্র মোড়কজাত করে এগুলো ধ্বংস করার জন্য ওই স্থানে স্তুপ করা হয়েছিল।অভিযানে জানা যায়, ভ্যাট গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় থেকে এগুলো গোপনে ধ্বংস করার জন্য সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে অভিযানকালে দেখা যায়, এটি নিবন্ধনের ঘোষণা বহির্ভূত স্থান। অভিযানের পর ওই কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে ঘটনাস্থলে মালিক পক্ষকে অনুরোধ করলে তারা প্রতিষ্ঠান খুলে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করেন।এ সময় অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের চাহিদা মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের উপস্থিত কর্মকর্তারা ভ্যাট সংক্রান্ত নথিপত্র প্রদর্শন করেন। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কম্পিউটারসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক দলিলাদি তল্লাশি করা হয়। এর সূত্র ধরে পরবর্তীতে মূসক সংক্রান্ত সব দলিলাদি জব্দ করা হয়।তদন্তকালে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন, দাখিলপত্র (মূসক-১৯) এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানের জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপি ও অন্যান্য দলিলাদি হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক পরিশোধের এ আইনী বাধ্যবাধকতাকে লংঘন করেছে মর্মে তদন্তে উঠে এসেছে।প্রতিবেদন অনুযায়ী তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে বিক্রয় মূল্য ২১ কোটি ২৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৩৮ টাকা কমিশন প্রদর্শন করেছে, যার ওপর তারা ১ কোটি ৫৪ হাজার ৬৫৫ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কমিশনসহ মোট ভ্যাটযোগ্য বিক্রয় মূল্য ছিল ৬৩২ কোটি ৩৩ লাখ ৭ হাজার ৯৮২ টাকা এবং এর ওপর প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ ২৮ কোটি ৩৬ লাখ ৭৮ হাজার ৮৭০ টাকা।এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ২৭ কোটি ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ২১৫ টাকা ফাঁকি উদঘাটিত হয়। এ ফাঁকির ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১১ কোটি ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮২ টাকা বিলম্বজনিত সুদ হিসেবে প্রযোজ্য হবে।অন্যদিকে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর তদন্তে দেখতে পায়, উল্লিখিত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে ১১ লাখ ২৮ হাজার ৫৭০ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ২০ লাখ ৭৭ হাজার ১০২ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৯ লাখ ৪৮ হাজার ৫৩২ টাকা ফাঁকি উৎঘাটিত হয়। এ ফাঁকির ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ৫ লাখ ১২ হাজার ৩২৫ টাকা সুদ টাকা আদায়যোগ্য হবে।বর্ণিত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৭ টাকা এবং সুদ বাবদ ১১ কোটি ৫৩ লাখ ৬০ হাজার ৬ টাকাসহ ৩৮ কোটি ৯৯ লাখ ৩২ হাজার ৭৫৪ টাকা পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়।তদন্তে আরও দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্যসহ নানা ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে, যা ভ্যাট আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তদন্তে উদ্ঘাটিত পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনার বরাবর পাঠানো হয়েছে।

Share.