ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির এ সময়ে সীমিত পরিসরে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে আজ। আগে থেকেই সৌদি আরবে ছিলেন এমন এক হাজার সৌভাগ্যবান মুসলমান এবার হজের সুযোগ পেয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৭০ ভাগ মুসলিম সৌদি আরবে প্রবাসী হিসেবে বসবাস করেন। আর বাকি ৩০ ভাগ সৌদি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, স্বাভাবিক সময়ে পবিত্র মক্কা ও মদিনায় ২০ লাখের বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি হজ পালন করলেও করোনাকালীন বাস্তবতায় এবার মাত্র এক হাজার মুসল্লি হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন।সংবাদমাধ্যম সৌদি গেজেট জানিয়েছে, এবারের হজে অভূতপূর্ব এক পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। করোনা মহামারিজনিত পরিস্থিতিতে এবারের ব্যতিক্রমী হজে প্রতি ৫০ জন হজযাত্রীর জন্য একজন করে ‘স্বাস্থ্য নেতা’ নিয়োগ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই স্বাস্থ্য নেতা তাঁর দলের হজযাত্রীরা স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিষয়গুলো যথাযথভাবে মানছেন কি না, তা নিশ্চিত করবেন।সৌদি কর্তৃপক্ষের দেওয়া সতর্কতামূলক ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা-সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো হজযাত্রীরা অনুসরণ করছেন কি না, তা নিশ্চিত করবেন সংশ্লিষ্ট দলের নেতৃত্বে থাকা স্বাস্থ্য নেতা। সৌদি প্রেস এজেন্সি এক বিবৃতিতে গতকাল মঙ্গলবার এ খবর জানিয়েছে। সতর্কতামূলক ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা-সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে হজযাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং পবিত্র স্থানগুলোতে চলাফেরায় যাতে হজযাত্রীদের কোনো অসুবিধা না হয়, তার খেয়াল রাখা ইত্যাদি।হজযাত্রীদের নেতৃত্ব থাকা এসব স্বাস্থ্য নেতা একেকজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তাঁরা হজযাত্রীদের জন্য নির্ধারিত বাসে থাকা অবস্থায়ই পূর্বসতর্কতামূলক একটি ফেম পূরণ করবেন এবং হজযাত্রীদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন। কোনো হজযাত্রীর শারীরিক অবস্থা সন্দেহজনক হলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সে বিষয়ে অবহিত করবেন।গত বছরও হজ পালন করেছিলেন ২০ লাখের বেশি মুসল্লি। একসঙ্গে ‘আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ ধ্বনির মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানিয়েছিলেন তাঁরা। মহামারি করোনাভাইরাস সে দৃশ্যপট পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে এবার। লাখ লাখ নয়, এবার হজ পালন করছেন সৌভাগ্যবান এক হাজার মুসলমান।গতকাল মঙ্গলবার বিকেলেও দেখা গেছে, পবিত্র কাবা ও পবিত্র কালো পাথর (হাজরে আসওয়াদ) জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে সুগন্ধি। হজে অংশগ্রহণকারী সবার করোনা পরীক্ষা সম্পন্ন করে ২০ দিন আগেই মক্কার হোটেলগুলোতে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছিল। তাঁদের হাতে বিশেষ যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছিল, যাতে তাঁদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা যায়। গত দুদিন আবারও তাঁদের পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয়, কেউ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত নন। সে কথাই জানালেন সৌদি আরবপ্রবাসী মালয়েশিয়ার নাগরিক ফাতিন দাউদ।ফাতিন দাউদ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আমি এবার হজের সুযোগ পেয়েছি। তাঁরা আমার দুবার টেস্ট করেছে। একবার আমার জেদ্দার বাসায়। আর এখানে মক্কায়। আর একটি ইলেকট্রনিক ব্রেসলেট পরিয়ে দিয়েছে, যাতে আমার খোঁজ তাঁরা রাখতে পারেন।’সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. আমর আল-মাদ্দাহ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এমন ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে কেউ হজে এসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হন। যাতে কারো অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু না হয়।’আর হাজিদের সবাইকে ব্যক্তিগত মেহমান হিসেবে গ্রহণ করেছেন সৌদি বাদশাহ। যে কারণে খাবার, থাকা, চিকিৎসাসহ সব ব্যয়ভার বহন করছেন সৌদি বাদশাহ নিজে।
এবারের হজে প্রতি ৫০ মুসল্লির জন্য থাকছেন একজন ‘স্বাস্থ্য নেতা’
0
Share.