এমপি পাপুলের চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণ শিগগিরই

0

ঢাকা অফিস: বাংলাদেশের সংসদ সদস্য মানবপাচার ও অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় দেশের বাইরে গ্রেপ্তার হওয়া নতুন নজির সৃষ্টি করেছেন লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় কুয়েতের আদালত চার বছর সাজা দিয়েছেন। তবে পাপুলের বিষয়ে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু জানে না। কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলের বিষয়ে কুয়েত সরকারের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। কুয়েত সরকারের আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য পাওয়া গেলে সেটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই তথ্য জাতীয় সংসদে পাঠাবে। সংসদ তখন পাপুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। সবকিছু ঠিক থাকলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য পেলে শিগগিরই পাপুলের চূড়ান্ত ভাগ্য শিগগির নির্ধারণ হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনজনিত কোনও ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না। সেদিক থেকে মানব ও মুদ্রাপাচারের মামলায় গত ২৮ জানুয়ারি কুয়েতের ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল ওসমান বাংলাদেশের এমপি পাপুলকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি ৫৩ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়।তবে কুয়েতে পাপুলের সাজার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন গত রোববার বলেন, মানবপাচার, আবাসিক ভিসা বাণিজ্য ও অর্থপাচার সম্পর্কিত মামলায় বাংলাদেশি সংসদ সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম ওরফে কাজী পাপুলের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়ে কুয়েত সরকার এখনও কিছু জানায়নি। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এটি সম্পর্কে অবগত না হওয়া পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, কুয়েত সরকারের কাছ থেকে নথি পেলেই তারা সংশ্লিষ্ট অফিস এবং সংসদে বিষয়টি জানাবেন। পরে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের ৬ জুন মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে বড় ধরনের নাড়া পড়ে গেছে কুয়েতের প্রশাসন আর রাজনৈতিক অঙ্গনে।সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে ওই আসনটি আওয়ামী লীগ তাদের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেষ মূহূর্তে ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ পাপুলের পক্ষে কাজ করেছিলেন। পরে জানা যায়, সেই ভোটে ছিল অনেক টাকার খেলা।পাপুল নিজে এমপি হওয়ার পর একই কায়দায় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কোটায় স্ত্রী সেলিনা ইসলামকে সংরক্ষিত আসনের এমপি করে আনেন।পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে কুয়েতে বাংলাদেশি কমিউনিটির ধারণা। প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকেও তার বড় অংকের শেয়ার রয়েছে।এমপি পাপুলের সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় সংসদ সদস্য পদটি সাংবিধানিক। কোনও এমপি নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন, তার পদ থাকবে কি-না সেটি সংবিধান নির্ধারণ করা হয়েছে। রায়ের কপি পেলে সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য পাপুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, দেশের সংসদ সদস্য অপরাধের দায়ে বিদেশে গ্রেপ্তার হবেন এটা দুঃখজনক। কুয়েতে বাংলাদেশের যে রাষ্ট্রদূত রয়েছেন, তিনি দেশের আইন মন্ত্রণালয়কে জানালেই স্পিকার ব্যবস্থা নেবেন।সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারের উচিত কুয়েতের আদালতে পাপুলের কারাদণ্ডাদেশের কপি সংগ্রহ করে দ্রুত তার সদস্যপদ বাতিল করা। সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনও সংসদ সদস্য যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনও ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন এবং ন্যূনতম দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তার নৈতিক স্খলন হয়েছে, তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।প্রসঙ্গত, এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে শুধু অভিযোগ নয় সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দম্পতির কন্যা ওয়াফা ইসলাম, পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন আক্তারকেও ১৪৮ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন এবং প্রায় ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার সম্পত্তি গোপন করার অভিযোগে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

Share.