ঢাকা অফিস: বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যে কোনো মূল্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব মানুষের ঐক্যকে ইস্পাতকঠিন করে গড়ে তুলে সেটা ধরে রাখতে হবে। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। এই মন্ত্র সামনে রেখেই একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক আইনের শাসনের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ঐক্যবদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল জাতিকে কেউ কখনো পদানত করতে পারে না। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। বর্তমান পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশবাসী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশবাসীর প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান হচ্ছে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে গণমানুষের মধ্যে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক আইনের শাসনের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ সৃজনের যে তীব্র আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়েছে, সেই আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখা। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক যাত্রায় আমরা যেন এ দেশের মানুষকে নিয়ে সঠিকভাবে হাঁটতে পারি। সে জন্য আমাদের সর্বোচ্চ ঐক্য ধরে রাখতে হবে। যে ঐক্যের মূলমন্ত্র হবে- ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। দেশ আমাদের সবার ওপরে। অন্তর্বর্তী সরকারের কর্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, ‘৫ মাস খুব বেশি সময় নয়, আবার কমও নয় একটা অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়নের জন্য। তবে বিপ্লব-উত্তর পরিস্থিতিতে মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে গণঅভ্যুত্থান এবং গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে যেভাবে যাত্রা শুরু হয়েছিল, ঠিক সেভাবে সেই গতিতে যাচ্ছে বলে মনে হয় না। সে জন্য এ সরকারকে আরও বেশি কর্মক্ষম এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সংস্কারের কার্যক্রম শুরু করা উচিত। বিশেষ করে নির্বাচন-সংক্রান্ত যেসব সংস্কারের সুপারিশগুলো পাওয়া যাবে, সেগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে আরম্ভ করা দরকার। এই সরকারের প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক নির্বাচন উপহার দেওয়া। সেটা রোডম্যাপ ঘোষণার মধ্য দিয়েই জাতিকে পরিষ্কার চিত্র দেওয়া উচিত।’ গণআন্দোলনের প্রত্যাশা পূরণের বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। বিপ্লব-উত্তর সময়ে অধিকারহারা জনগণের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার যে তীব্র আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়েছে, সেটা রাতারাতি পূরণ হয়ে যাবে, বিষয়টা এমন নয়। তবে জনগণ চায় সেই অধিকার পূরণের প্রক্রিয়াটা যেন শুরু হয়। তারা কথা বলতে পারবে, সমাবেশ করার অধিকার পাবে। আইনের শাসনের বাংলাদেশ পাবে। এই প্রত্যাশা তাদের অবশ্যই সংগত এবং আমার মনে হয়, এই প্রক্রিয়াগুলো শুরু হয়েছে। গতিটা হয়তো সেভাবে পায়নি। আমরা আশা করছি, জনগণের সেসব প্রত্যাশা অবশ্যই একদিন পূরণ হবে।’ সরকারের উপদেষ্টা যারা আছেন তাদের মধ্যে দুই-একজন ছাড়া কেউ বিপ্লবী ছিলেন না, এই সরকার পরিচালনায় কতটুকু বিপ্লবী ভূমিকা আছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা এটাকে গণঅভ্যুত্থান বা গণবিপ্লব যা-ই বলি না কেন, এটা আসলে সমাজ পরিবর্তনের কোনো অভ্যুত্থান বা বিপ্লব নয়। এটা ছিল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অধিকারহারা জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়ার সংগ্রাম। এখানে ছাত্র-জনতাসহ সব জনগণের মধ্যে একটা ঐক্য তৈরি হয়ে গিয়েছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। সুতরাং বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা এক জিনিস, আর গণবিপ্লবের চাহিদা আরেক জিনিস। যেখানে জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য সংগ্রাম করেছে। সুতরাং এখানে বিপ্লবী কোনো ধারণা, বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষা এবং বিপ্লবী ম্যানিফেস্টো আমরা রাতারাতি পাব এবং সে রকম নেতৃত্ব দেওয়ার মতো লোকজন ওভার নাইট সৃষ্টি হবে সে রকম আশা করাটাও ঠিক নয়। তবে আমি মনে করি, যারা বর্তমান উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন এবং নিয়েছেন তারা অবশ্যই যোগ্য লোক। কিন্তু তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা অতীতে ছিল না। এটা একটা ঘাটতি। তাঁরা অনেকে শিক্ষকতা করেছেন, এনজিও পরিচালনা করেছেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটা অনেক সমস্যাসঙ্কুল রাষ্ট্র পরিচালনা করা এবং জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার মতো অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি দরকার জনগণের এই চাহিদা ও ইচ্ছা পূরণ করার জন্য। দ্রব্যমূল্য নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন,‘দেশের অনিশ্চিত ও অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগকারীই বিনিয়োগ করতে চায় না। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও স্বাভাবিক সময়ের মতো সুচারুভাবে পরিচালিত হয় না। এই স্বাভাবিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বাজার এবং সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য একটি স্থিতিশীল নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন বলে সারা বিশ্ব মনে করে এবং আমরাও মনে করি। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে আরেকটি প্রচলন আছে যে একটি স্থিতিশীল নির্বাচিত সরকার আরেকটি স্বল্প সময়ের সরকারের সাথে দীর্ঘমেয়াদি কোনো চুক্তিতে যেতে চায় না। এজন্য যত তাড়াতাড়ি একটি নির্বাচিত স্থিতিশীল সরকার দায়িত্ব নেবে তত তাড়াতাড়ি এই বাজার ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে। তখন আর এই সমস্যাটা থাকবে না।’ সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘১৫-১৬ বছরের ফ্যাসিবাদি শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য যারা এই ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে অনুগামী হয়েছিল, বা তাদের সাথি হয়েছিল, তার মধ্যে প্রশাসন অন্যতম। এই প্রশাসনকে রাতারাতি খোলনলচে পাল্টে দেবে এমন ধারণা করাও ঠিক নয়। প্রচেষ্টা চলছে, তবে ধীরগতিতে। এটা আরও দ্রুতগতিতে হওয়া উচিত। এই প্রশাসনকে যত তাড়াতাড়ি ফ্যাসিবাদের দোসরমুক্ত করা সম্ভব হবে, তত তাড়াতাড়ি অস্থিরতা নিরসন হবে।’
ঐক্যের মূলমন্ত্র হবে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’: সালাহউদ্দিন আহমেদ
0
Share.