কঠোর বিধিনিষেধেও রাস্তায় যানজট, অবনতির আশঙ্কা

0

ঢাকা অফিস: করোনা সংক্রমণের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের অসচেতনতা। কঠোর বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করেই ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন তারা। মামলা, গ্রেপ্তার, জরিমানা কোনো কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না নগরবাসীর চলাচল। এমনটা চলতে থাকলে করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।এক কিলোমিটার দীর্ঘ যানবাহনের জট। কে বলবে সোমবারই দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। দেশে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ।মঙ্গলবার (০৬ জুলাই) ষষ্ঠ দিনে নগরীর সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত যানবাহন আর রিকশার দাপটে রয়েছে। একসঙ্গে এত মানুষের উপস্থিতিতে বিধিনিষেধ মনিটরিংয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে।জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অনেককেই দেখা গেছে অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি করতে। মুখে ছিল না মাস্ক। ব্যক্তিগত গাড়িতে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহনও করেছেন অনেকে। আবার অনেকেই গাদাগাদি করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চলাচল করছেন।রাজধানীবাসীর এমন অসচেতনতা করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তোলার শঙ্কা জাগাচ্ছে। তাই নগরীর মোড়ে মোড়ে, সড়কে টহলের পাশাপাশি মাইকিং করে নগরবাসীকে সচেতন করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।র‌্যাব-৪-এর সিইও মোজাম্মেল হক বলেন, যতই দিন যাচ্ছে মানুষ বের হচ্ছেন, করোনা পরিস্থিতি অবনতির জন্য মারাত্মক সহায়ক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এক্ষেত্রে গণসচেতনতা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। যেমন অনেকে আছেন প্রতিদিন কাঁচাবাজার করেন, এটা না করলেও হয়। একটু বেশি করে কিনে রাখলে সেটা তো রাখা যায়। মূলত নিজে থেকে সচেতন হতে হবে।  আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে সোমবার (৫ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে লকডাউনের সময় বাড়িয়ে আদেশ জারি করা হয়।এর আগে ১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) থেকে সাত দিনের কঠোর লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সরকারের পক্ষ থেকে এবার বিধিনিষেধ ‘কঠোর’ই করার কথা বলা হয়। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলেই গ্রেপ্তার করার কথা বলে পুলিশও।বিধিনিষেধ মানতে বাধ্য করতে মাঠে নামানো হয় সেনাবাহিনীও।লকডাউন নিয়ে গত ৩০ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়:করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশে সকল সরকারি-বেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত অফিস বন্ধ করে সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। লকডাউনে বন্ধ থাকবে গণপরিবহন-শপিংমল। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু থাকবে শিল্পকারখানা। ৭ দিনের এই লকডাউনে কেউ বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বাইরে বের হলেই কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।সেই সময় শেষ না হতেই মহামারি করোনা রোধে আবারো চলমান কঠোর বিধিনিষেধের (লকডাউন) মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে।প্রজ্ঞাপনে যা আছে:

১. সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসসমূহ বন্ধ থাকবে।
২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
৪. সকল পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
৫. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহাত্তোর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
৬. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৭. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৮. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস-জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসহ অনান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবায় সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শনসাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।
৯. পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্র্যাকলরির/কাভার্ড ভ্যান/কাগো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
১০. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
১১. শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।
১২. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
১৩. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৪. টিকা কার্ড প্রদর্শনসাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।
১৫. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (Online/Take away) করতে পারবে।১৬. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবে।
 ১৭. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
 ১৮. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার‘ বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
 ১৯. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সে সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
২০. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
২১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।
Share.