লাইফস্টাইল ডেস্ক: করোনা একটি প্রাণঘাতী ভাইরাস এবং এ রোগ মারাত্মক ছোঁয়াচে জনিত। করোনাভাইরাস ছড়ায় মূলত হাঁচি, কাশি ও কথা বলার মাধ্যমে। আর এই ভাইরাস আমাদের শরীরে মুখ ও শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করে গলায় ৩-৪ দিন অবস্থান করে বংশ বিস্তার লাভ করে। তাই দাঁত ও মাড়ির যত্নে একটু বাড়তি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কেননা, একদিকে করোনার ভয়ানক ছোবল ও অন্যদিকে রোজা রাখার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে পানাহার থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে। তাই বাড়িতে বসেই দাঁত ও মাড়ির যত্নে করনীয়গুলো তুলে ধরা হলো।১. রাতে ঘুমানোর আগে ও সকালে নাস্তা খাওয়ার পর সঠিক নিয়মে ২-৩ মিনিট সময় নিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন। (রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারের পর দাঁত ব্রাশ করুন)।
২. দাঁত ব্রাশ করার পর ডেন্টাল ফ্লস বা সুতা ব্যবহার করে দুই দাঁতের ফাঁকে আটকে বা জমে থাকা খাবারের অংশ (মাছ, মাংস ও শাক-সবজি) পরিষ্কার করুন। নতুবা দুই দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবারের অংশগুলো পচে মাড়ির রোগ সৃষ্টি করবে ও মুখে দুর্গন্ধ হবে। (রোজাদার ব্যক্তির জন্য ডেন্টাল ফ্লস বা সুতা ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি)।
৩. নিয়মিত তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে মাড়ি ম্যাসেজ করুন। তাতে মাড়ির রক্ত সঞ্চালন বাড়বে ফলে দাঁতের মাড়ি সুস্থ থাকবে এবং মাড়ির রোগের সম্ভাবনাও কমে যাবে।
৪. ইফতারের পর সেহরি পর্যন্ত ৩-৪ বার গরম মসলা বা লেবুর চা অথবা গ্রিন-টি পান করতে পারেন। তাতে করে গলা শুকিয়ে যাবে না। তাছাড়া গ্রিন-টি’তে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৫. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন ও অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলুন।“শিশুদের দিকে একটু বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ ৬ মাস বয়স থেকে ৩০ মাস বয়সের মধ্যে দুধদাঁত মুখে উঠে যায় এবং ৬ বছর থেকে দুধদাঁত পরে গিয়ে স্থায়ী দাঁত উঠা শুরু করে। অনেক সময় বাচ্চারা নিজেরা দাঁত ও মাড়ির যত্ন নিতে পারে না। ফলে বাচ্চাদের মুখে ইনফেকশন হওয়ার সুযোগ থেকে যায়। তাই নিজেরাই বাচ্চাদের দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিন।”
৬. প্রতিদিন ১-২ বার ক্লোরোহেক্সিডিন বা পোভিডন আয়োডিন সমৃদ্ধ মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন অথবা কুসুম গরম পানিতে হালকা লবণ মিশিয়ে কুলকুচি ও গলগল করতে পারেন। তাতে মুখ ও গলা জীবাণুমুক্ত থাকবে। তবে রমজানে কুলকুচি ও গলগলের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করুন। যেন মুখের ভেতরে প্রবেশ না করে।
৭. ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপ, কিডনি রোগে আক্রান্ত অথবা যেকোনো জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে যেন রক্তচাপ, রক্তে সুগারের লেবেল নরমাল থাকে। তা না হলে অনেক বিপদ হতে পারে।
৮. নিয়মিত শিষ্টাচার মেনে চলুন। মুখে মাস্ক পরা ব্যতীত বাড়ির বাইরে যাবেন না। কথা বলার সময় পরস্পরের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন।
৯. অপ্রয়োজনে বাসার বাইরে যাবেন না।
১০. বাসার বাইরে বের হলে সব কাজ শেষ করে একবারেই বাসায় ঢুকুন। বার বার আসা-যাওয়া করা এড়িয়ে চলুন। বাহির থেকে বাসায় ফেরার পর ভালো করে গোসল করে নিন এবং বাহিরে পরা কাপড় কমপক্ষে ৩০ মিনিট সাবান-পানিতে ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে নিন।
১১. কোনো কিছু ধরার আগে ও পরে ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
দাঁত ও মাড়ির সুস্থ গঠনের জন্য এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে ৩টি গুণের সমন্বয় রাখা প্রয়োজন।
- দাঁত গঠনের উপযোগী : মাছ, মাংস, ডিম, ছোলা, বাদাম, সয়াবিন, গম ইত্যাদি।
- শক্তি সরবরাহকারী : চাল, ডাল, তেল, মাখন, চিনি, ছোলা, আলু ইত্যাদি।
- প্রতিরোধমূলক : শাক-সবজি, ফল, দুধ ইত্যাদি।
জরুরি অবস্থা সমূহ :
- দাঁত ও মাড়ির তীব্র ব্যথা অনুভব করা : অনেক সময় দাঁতের ইনফেকশনের কারণে মাথা, ঘাড়, গলা ও কানে ব্যথা হতে পারে।
- গাল ফুলে যাওয়া।
- মাড়ি ফুলে যাওয়া ও রক্ত পরা বা পুঁজ বের হওয়া।
- মুখে ঘা হওয়া।
- অ্যাক্সিডেন্টের কারণে চোয়ালের হাড় ভেঙে যাওয়া ও দাঁতের অংশ ভেঙে যাওয়া।
- মুখের ভিতর থেকে রক্তপাত হওয়া ইত্যাদি।
কারো ক্ষেত্রে যদি জরুরি অবস্থা হয় তাহলে বিলম্ব না করে তাৎক্ষণিক রেজিস্টার ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নেয়া উচিত।