করোনার নতুন ধরন নিয়ে যা বলছেন দেশের বিশেষজ্ঞেরা

0

ডেস্ক রিপোর্ট: ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশসহ কানাডা ও জাপানে নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন বা স্ট্রেইন শনাক্ত করা হয়েছে। ফলে এটি নতুন করে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে করোনা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। এদিকে দেশের বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, করোনার নতুন এই স্ট্রেইন বা ভ্যারিয়েন্ট শিশুদের বেশি সংক্রমিত করছে। আর এটিই বেশি উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। এদিকে, করোনা মহামারি শুরুর পর করোনার নতুন এই বিবর্তিত রূপের সংক্রমণের হার বেশি বলে জানা গেছে। সবমিলিয়ে বৈশ্বিক এই পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।করোনার নতুন ধরন শনাক্ত প্রসঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশের জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভাইরোলজিস্ট) অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘দেশ-বিদেশের করোনা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে আমরা এখন পর্যন্ত যা জেনেছি, তাতে করোনার নতুন এই রূপ শিশুদের বেশি আক্রান্ত করছে। এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ খারাপ দিক। কারণ, প্রাপ্তবয়স্কদের মতো করে শিশুদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।’ নজরুল ইসলাম আশঙ্কা করে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত করোনার যেসব টিকা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা চলছে, সেগুলো সব ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু করোনাভাইরাসের নতুন ধরন তো বেশি আক্রান্ত করছে শিশুদের। তাহলে উপায় কী? আমার-আপনার বাচ্চা টিকাহীন থাকবে?’ করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির সংক্রমণের হার ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হতে পারে জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমিসহ টেকনিক্যাল কমিটি সরকারকে অন্তত ১৪ দিন ইউরোপসহ যেসব দেশে করোনার নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত হয়েছে, সেসব দেশ থেকে ফ্লাইট বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা, সবই চলছে। দুই-তিনদিন আগেও লন্ডন থেকে ২০০ যাত্রী নিয়ে একটি ফ্লাইট এসেছে দেশে। নতুন এই স্ট্রেইনকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’ নজরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলেছি, এই ১৪ দিনের মধ্যে আমাদের যথাযথ কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠিত করার পর সরকার চাইলে ফ্লাইট আবার চালু করতে পারে। তবে ওই সব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের অবশ্যই ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। সাত দিনের কোয়ারেন্টিন কোনো যথাযথ সিস্টেম হতে পারে না। ১৪ দিন পর তারা করোনা নেগেটিভ হলে তবে ছেড়ে দেওয়া হবে। না হলে হাসপাতালে ভর্তি থাকবে।’ বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির পূর্বাভাসবিষয়ক বিশেষজ্ঞ দলের এক সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক সৈয়দ আবদুল হামিদ। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা সরকারকে নানা সময়ে করোনার নানা পূর্বাভাস দিয়ে আসছি। গত ১৪ ডিসেম্বর এক ভার্চুয়াল সভায় আমরা পাঁচজন বলেছি, আগামী জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। সেজন্য যথাযথ প্রস্তুতি রাখতেও আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের সরকারি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়েছি।’ জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের কী অবস্থা হতে পারে—এমন এক প্রশ্নে পরামর্শক কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা, ইনফুলেঞ্জা-৩, রাইনো ভাইরাস ও রেসপিরেটোরি সিনসিটিয়াল নামক চারটি ভাইরাস দেখা যায়। এ ভাইরাসগুলো বেশির ভাগ মানুষকে আক্রান্ত করে থাকে। আর ভাইরাসের ধর্ম হচ্ছে, একটি ভাইরাস শরীরের প্রবেশ করলে অন্য ভাইরাসকে ঢুকতে দেয় না। সেক্ষেত্রে আপাতত পরিস্থিতিতে উপকারি এই ভাইরাসগুলো যদি আমাদের সংক্রমিত করে, তাহলে শীতে করোনা না-ও বাড়তে পারে। আবার ওই পাঁচজন যে পূর্বাভাস দিয়েছেন, সেটিও হতে পারে।’করোনার জন্য প্রস্তুত টিকাগুলো নতুন স্ট্রেইনটির জন্য সমানতালে কাজ করবে কি না—এমন প্রশ্নে ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা তো করোনারই আরেকটি রূপ। সুতরাং, কাজ করার কথা। তবে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ধারণা করছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজ না-ও করতে পারে। যেমন স্পাইক প্রোটিনের ক্ষেত্রে এটি কাজ করবে না।’

Share.