করোনায় মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মৃত্যু

0

ঢাকা অফিস: মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আজিজুর রহমান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৫ আগস্ট বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন আজিজুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এই জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে মৌলভীবাজার থেকে ঢাকায় আনা হয়। আজিজুর রহমান ছিলেন সাবেক গণপরিষদ সদস্য, দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক হুইপ, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, মহান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত বীর মুক্তিযোদ্ধা। সর্বশেষ মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি মৌলভীবাজার ইউনিটের চেয়ারম্যানসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করছিলেন আজিজুর রহমান। তিনি একজন সাংস্কৃতিক ও নাট্যকর্মী থেকে নিজের সততা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায় হয়ে ওঠেন দেশ, মাটি ও গণমানুষের নেতা। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ৪ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযুদ্ধকালীন মৌলভীবাজার জেলা রাজনৈতিক সমন্বয়কারী ছিলেন তিনি। আজিজুর রহমান ১৯৪৩ সালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের গুজারাই গ্রামে জন্ম নেন। শুধু মুক্তিযোদ্ধা নয়, তিনি একাধিকবার পাক বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন এবং পাক হানাদারদের হাতে নির্যাতনের শিকারও হন। আজিজুর রহমান ১৯৫৯ সালে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৬২ সালে মৌলভীবাজার কলেজ থেকে আই.কম পাস করেন এবং হবিগঞ্জের বৃন্দাবন কলেজ থেকে বি.কম পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.কম পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ওই সংসদে তিনি সবচেয়ে কম বয়সী ও কনিষ্ঠ সংসদ সদস্য ছিলেন। এরপর ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে টানা দুবার মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একবার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় হুইপ ও একবার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পেশিশক্তিনির্ভর রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার এক অনুকরণীয় নাম আজিজুর রহমান। তিনি সততা, অসাম্প্রদায়িকতা ও অহিংস রাজনীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মৌলভীবাজার জেলায়। রাষ্ট্র, সরকার ও দলের এতসব গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও দেশ ও সাধারণ গরিব-দুঃখী মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে আজীবন কাজ করে গেছেন। এতসব গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার পরও কোনোদিন ব্যক্তিগত কর্মী বা দেহরক্ষী রাখেননি। সরকারি সুযোগ-সুবিধাও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেননি। মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আজিজুর রহমানকে সরকারি কাজ ছাড়া সরকারের দেওয়া গাড়ি অফিস সময়ের পর ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। তিনি আজন্ম প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক অহিংস রাজনীতিবিদ ও সংস্কৃতিমনা একজন মানুষ ছিলেন।মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগ, জেলা যুবলীগ ও জেলা আওয়ামী লীগে সভাপতি-সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ একাধিক পদে সফলতা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।আজিজুর রহমান যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে থেকে সহায়তা ও সাহস জুগিয়েছেন। সর্বশেষ করোনা মহামারিসহ ঝড়বৃষ্টি, বন্যা, নদীভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাত-দিন মানুষের সহায়তায় কাজ করা একজন সাদা মনের মানুষ। এর আগে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব সফলতা ও সততার সঙ্গে পালন করেন তিনি।

Share.