করোনায় সুস্থ হওয়ার ১৪০ দিনের মধ্যে ৮ জনে ১ জন মারা যাচ্ছেন বৃটেনে

0

ডেস্ক রিপোর্ট: বৃটেনের লেস্টার ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় ভয়াবহ তথ্য দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যেসব মানুষ সেখানে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, সুস্থ হয়ে বাসায় যাচ্ছেন- তাদের প্রতি আট জনের মধ্যে একজন মারা যাচ্ছেন ১৪০ দিনের মধ্যে। হাসপাতালে ভর্তি করা রোগীরা বাসায় ফেরার পর তাদের মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগকে আবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে। এতে আরো বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী আরো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তা থেকে বহু মানুষ হার্টের নানা জটিলতাসহ আরও অনেক জটিলতায় ভুগতে পারেন।। রিপোর্টে বলা হয়েছে, হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে যেসব করোনা রোগী বাসায় ফিরে গেছেন তাদের মধ্যে এক ভাগেরও বেশি রোগীকে ৫ মাসের মধ্যে আবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত জটিলতার জন্য তাদের মধ্যে প্রতি আট জনের একজন মারা যাচ্ছেন। লেস্টার ইউনিভার্সিটি এবং অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস (ওএনএস) গবেষণা করেছে ৪৭,৭৮০ জন রোগীর ওপর। প্রথম দফায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর তাদেরকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে শতকরা প্রায় ২৯.৪ ভাগকে আবার ১৪০ দিনের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ১২.৩ ভাগ রোগী মারা গিয়েছেন। দীর্ঘমেয়াদে করোনা ভাইরাসের কারণে শুধু যে হার্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে এমন না। একই সঙ্গে ডায়াবেটিস, জটিল লিভার সংক্রান্ত এবং কিডনির সমস্যা দেখা দেয়। লেস্টার ইউনিভার্সিটির ডায়াবেটিস এবং ভ্যাসকুলার মেডিসিন বিষয়ক প্রফেসর কমলেশ খুন্তি এই গবেষণারকর্মের লেখক। তিনি বৃটেনের টেলিগ্রাফকে বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে মুক্তি পাওয়া রোগীদের ওপর এটাই সবচেয়ে বড় গবেষণা। তিনি বলেছেন, হাসপাতাল থেকে যেসব রোগী ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব। তারা আবার হাসপাতালে ফিরে আসছেন। তাদের ভিতর অনেকে মারা যাচ্ছেন। আমরা দেখতে পেয়েছি, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেয়া রোগীদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ আবার হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এমন মানুষের সংখ্যা বিপুল। অন্যদিকে আরেক তথ্যে বলা হয়েছে, বৃটেনের স্বাস্থ্য বিষয়ক (এনএইচএস) কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ইংলিশ এনএইচএস হাসপাতালগুলোতে প্রতি ৬ জনের মধ্যে একজন রোগী হাসপাতালে গিয়েছিলেন ভাইরাস আক্রান্ত না হয়েই। কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন। রোববার বৃটেনে করোনা ভাইরাসে কমপক্ষে ৬৭১ জন মানুষ মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন নতুন করে ৩৮,৫৯৮ জন। এনএইচএসের ইংল্যান্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যার সিমন স্টিভেন্স বলেছেন, প্রতি ৩০ সেকেন্ডে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত একজন করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারক লর্ড সাম্পশন পাকস্থলির ক্যান্সারে আক্রান্ত ডেবোরাহ জেমসকে নিয়ে টেলিভিশনে মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে রয়েছেন। তিনি বলেছেন, অন্য মানুষের তুলনায় ডেবোরার জীবন কম মূল্যবান।
বৃটেনে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। এ অবস্থায় প্রফেসর খুন্তি বলেছেন, করোনা নয়, অন্য রোগ নিয়ে হাসপাতালে ফিরছেন রোগীরা। তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত নই যে, বেটা সেল বা বেটা কোষকে করোনা ভাইরাস ধ্বংস করে দেয়ার জন্য এমনটা হচ্ছে কিনা। ইনসুলিন তৈরি করে এই বেটা সেল। এই সেলকে ধ্বংস করে দেয়ার ফলে একজন মানুষ টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। এ থেকে আস্তে আস্তে ডায়াবেটিস টাইপ-২তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ফলে আমরা ডায়াবেটিসের নতুন এসব বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য দেখতে পাচ্ছি। তার মতে, সরকার এখন করোনা ভাইরাসে মৃতের যে সংখ্যা দেখাচ্ছে, যদি দীর্ঘমেয়াদে অন্য সমস্যায় আক্রান্তরা হাসপাতালে যেতেন, তাহলে এই সংখ্যা অনেক বেশি দেখা যেতো। এর আগে ডিসেম্বরে ওএনএস হিসাব করে দেখেছে যে, করোনা আক্রান্ত প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের দেহে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষণ দেখা যায় তিনমাস পর্যন্ত বা তারও বেশি সময়কাল।

Share.