ডেস্ক রিপোর্ট: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নভেম্বরে। এর মধ্যে রিপাবলিকান দলের পক্ষে রয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেটদের প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইতিমধ্যে চীন ও করোনা ভাইরাস ইস্যু নিয়ে দ ‘জনের মধ্যে বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই যুদ্ধে জয়ের উপরই অনেকখানি নির্ভর করছে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে জয়ী হতে চলেছেন। মার্কিন প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিএনএনে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে সাংবাদিক স্টিফেন কলিনসন বলেন, ইস্যুটি নিয়ে প্রথম থেকেই চীনের ওপর ক্ষেপে আছেন ট্রাম্প। গত বছরের শেষ দিকে মহামারিটি সেখান থেকেই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল সমালোচনার মধ্যে রয়েছে দেশটির প্রশাসন। অভিযোগ উঠেছে, মহামারির সংকট উপলব্ধি করতে ট্রাম্পের দেরি হওয়ার কারণেই সেখানে এত এত মানুষ আক্রান্ত ও প্রাণ হারাচ্ছেন।তবে ৪২ হাজারেরও বেশি মার্কিনির মৃত্যুকে ট্রাম্প ধামাচাপা দিতে চাইছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সমালোচনা করে। স্টিফেন কলিনসন মনে করেন, প্রথম থেকে আক্রমণই ট্রাম্পের প্রধান প্রতিরক্ষা। তাই কোভিড-১৯ মোকাবেলায় নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে তিনি ভাইরাস মোকাবিলায় চীনের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। একইসঙ্গে প্রতিপক্ষ বাইডেনকে তিনি চীনের স্বার্থ রক্ষাকারী বলে দাবি করেছেন। কিন্তু সাবেক এই ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবির জোরালো উত্তর দিয়েছেন। তিনি দেশটিতে কোটি কোটি মানুষের বেকার হয়ে যাওয়া ও প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য ডনাল্ড ট্রাম্পকেই দায়ি করেন। বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে অপ্রস্তুত ও অরক্ষিত করে রেখেছিলেন। এই বাকযুদ্ধকেই বিশ্লেষকরা আগামি নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারক হিসেবে মনে করছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবথেকে বড় আভ্যন্তরীণ সংকট সৃষ্টি করেছে করোনা ভাইরাস। কিন্তু সেই সংকট থেকে দেশকে বের করে আনতে ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। তার নেয়া ভুল পদক্ষেপগুলোই হয়ত নভেম্বরে তার ভাগ্য নির্ধারণ করতে চলেছে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈরিতা শুধু ভাইরাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দুই দেশের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক কাঠামো, বিশ্বকে দেয়ার দৃষ্টিকোন ও অর্থনৈতিক অবস্থান নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্বে আরো উৎসাহ জুগিয়েছে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি ও বাণিজ্য যুদ্ধ। চীনকে নিয়ে রীতিমত জুয়া খেলতে শুরু করেছেন ট্রাম্প। বেইজিং এর সঙ্গে বাইডেনের সখ্যতার যে দাবি তিনি করছেন, সেটি তার জন্য সুবিধা বয়ে নিয়ে আসতে পারে। এর আগেও দেখা গেছে, নেতিবাচক আক্রমণ থেকে কিভাবে সফলতা বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম ট্রাম্প। কিন্তু করোনা ভাইরাস ইস্যুতে একই অস্ত্র ব্যবহার ট্রাম্পের জন্যও ঝুকিপূর্ন। কারণ, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রথম দিকে ট্রাম্প নিজেই কয়েক সপ্তাহজুড়ে চীনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, চীন তার মৃতের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করছে না। সেখানে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে সরাসরি সমর্থন দিয়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। একইসঙ্গে এখন যদি সেই একই দোষে তিনি জো বাইডেনকেও দোষারোপ করতে চান তাহলে তা হবে বড় ধরণের সাংঘর্ষিক আচরণ। মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর গত ২৪ জানুয়ারি ডনাল্ড ট্রাম্প টুইট করেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত কার্যকরভাবে কাজ করে যাচ্ছে চীন। অথচ সেই একই সময়ে চীনকে বাঁচাতে কাজ করে গেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা সে দাবি করছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের টুইটে বলা হয়েছিল, চীন করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় যে উদ্যোগ নিয়েছে ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ করেছে তার প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র। আমি আলাদা করে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ধন্যবাদ দিতে চাই।
করোনা ভাইরাস ইস্যুই নির্ধারণ করবে মার্কিন নির্বাচনের ফল
0
Share.