ডেস্ক রিপোর্ট: পুরো বিশ্বকে ওলটপালট করে দেয়া করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) নিয়ে প্রথমবারের মতো বৈঠক করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বৃহস্পতিবার এই বৈঠক করে বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্বে থাকা ১৫ সদস্যদেশের এই সংস্থা। তবে বৈঠকটিতে ভাইরাসটি মোকাবিলায় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরা ভার্চুয়াল ওই বৈঠকে ভাইরাসটি সম্পর্কে সদস্যদেশগুলোর প্রতিনিধিদের জানান। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি অনুসারে, এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে এর প্রকোপে মারা গেছেন ৯৫ হাজারের বেশি মানুষ। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৬ লাখ। গুতেরা পরিষদকে বলেন, মহামারিটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যও বড় ধরনের হুমকি। এতে সামাজিক অস্থিরতা ও সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনটা হলে এর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে লড়াই ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে। তিনি আরো বলেন, কভিড-১৯ মোকাবিলায় নিরাপত্তা পরিষদের অংশগ্রহণ শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জটিলতা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই উদ্বেগজনক সময়ে পরিষদের কাছ থেকে একতার ইঙ্গিত ও প্রতিজ্ঞা অনেক সহায়ক হবে। প্রসঙ্গত, করোনা মোকাবিলায় নিরাপত্তা পরিষদের নিষ্ক্রিয়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকেই দুষছেন কূটনীতিকরা। করোনা মোকাবিলায় পরিষদকে জড়াতে চাইছে না এই দুই শীর্ষ সদস্য। চীন বলছে, এটা পরিষদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, পরিষদের সকল পদক্ষেপই ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থলের দিকে ইঙ্গিত করে। এতে বিরক্ত চীন। উল্লেখ্য যে, কভিড-১৯ এর উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন পরিষদের প্রতি, সকল ধরণের রাজনীতিকরণ ও কালিমালেপনের কর্মকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ভাইরাসটিকে ‘চাইনিজ ভাইরাস’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, চীনের উচিৎ ছিল বিশ্বকে এ ব্যাপারে সতর্ক করতে আরো দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পরিষদের সদস্যরা দুটি আলাদা প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করছে। ভেটো দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন সদস্য- যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও বৃটেন একটি ফরাসি প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করছে। অন্যদিকে, বাকি ১০ সদস্য একটি তুনিশিয় প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করছে। বৃহস্পতিবার নয় নির্বাচিত সদস্যের অনুরোধে বৈঠকে বসে পরিষদ। বৈঠকে সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোয় করোনার প্রভাব নিয়ে গুতেরার পদক্ষেপকে সমর্থন জানায় পরিষদ। গুতেরা এক প্রস্তাবনায় সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোয় মানবিক সহায়তা প্রদানে প্রবেশাধিকারের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে করোনা মোকাবিলায় বা এর প্রভাবে সৃষ্ট আর্থিক মন্দা লাঘবে পরিষদের তেমন কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জাতিসংঘের পরিচালক রিচার্ড গোয়ান । তিনি বলেন, পরিষদ রোগটি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সংহতির প্রতিফলন দেখাতে পারে। অবশ্য ইতোপূর্বে পরিষদ বিভিন্ন বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০০০ ও ২০১১ সালে এইডস এবং ২০১৪ সালে আফ্রিকায় ইবোলা মহামারি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তাবনা পাস করেছে।
করোনা ভাইরাস নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক, পদক্ষেপ গ্রহণে সিদ্ধান্তহীনতা
0
Share.