করোনা ভ্যাকসিনের বড় ট্রায়াল শুরু করেছে জনসন অ্যান্ড জনসন

0

ডেস্ক রিপোর্ট: মডার্না বায়োটেক, ফাইজার-বায়োএনটেকের পর কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের বড় পরিসরে ট্রায়াল শুরু করেছে জনসন অ্যান্ড জনসন। প্রায় ৬০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির ভ্যাকসিন গ্রুপের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পল স্টোফেলস। ভ্যাকসিনটি একবার প্রয়োগেই রোগ প্রতিরোধ শক্তি তৈরি হবে বলে দাবি করেছেন জনসন অ্যান্ড জনসনের বিজ্ঞানী পল। তিনি জানান, জনসন অ্যান্ড জনসনের বানানো ভ্যাকসিনের একটিমাত্র ডোজ দেওয়া হবে স্বেচ্ছাসেবকদের। আর সে ডোজের মাত্রা এমনভাবেই ঠিক করা হয়েছে, যাতে একটি শটেই শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। বিজ্ঞানী বলছেন, এই ডোজে রক্তের টি-লিম্ফোসাইট কোষও সক্রিয় হবে। এই টি-কোষ ভাইরাল স্ট্রেইনসহ সংক্রমিত কোষকে নষ্ট করে দিতে পারে। টি-কোষ অ্যাকটিভ হলে শরীরে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ তৈরি হয়। বায়োমেডিকেল অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটির যৌথ উদ্যোগে এই ভ্যাকসিন তৈরি করছে জনসন অ্যান্ড জনসনের রিসার্চ উইং জ্যানসেন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যালেক্স গোরস্কি জানিয়েছেন, গবেষণাগারে পশুদের শরীরে এই ভ্যাকসিনের সেফটি ট্রায়ালে (নিরাপদ কিনা, তা পরীক্ষা করা) সুফল পাওয়া গেছে। এরপরই ড্রাগ রেগুলেটরি কমিটির অনুমোদনে যুক্তরাষ্ট্রে বৃহৎ ট্রায়াল শুরু হয়েছে। মার্কিন সরকারের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে প্রায় ১০০ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ তৈরির প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসন।কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে গত জানুয়ারি থেকে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক ও গবেষকদের সহযোগিতায় ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট বানিয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসন। গবেষকরা বলেছেন, সার্স-কভ-২ ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করে সেটিকে ল্যাবরেটরিতে বিশেষ পদ্ধতিতে শুদ্ধ (পিউরিফাই) করে এই ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তৈরি হচ্ছে। মানুষের শরীরে ঢুকলে সেই নিষ্ক্রিয় ভাইরাল প্রোটিন ‘মেমরি বি সেল’ তৈরি করবে। এই মেমরি বি সেলের কাজ হল বাইরে থেকে শরীরে ঢোকা ভাইরাল প্রোটিন বা অ্যান্টিজেনগুলোকে চিহ্নিত করে তার প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করা। সেইসঙ্গে সক্রিয় হবে টি-কোষ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এভাবেই ভাইরাসের মোকাবিলায় শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে উঠবে। যুক্তরাষ্ট্রে কে আগে করোনার ভ্যাকসিন আনবে—মডার্না বায়োটেক নাকি ফাইজার— এ নিয়ে জোর প্রতিযোগিতা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির দুই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিই তাদের ভ্যাকসিনের তৃতীয় স্তরের ট্রায়ালে রয়েছে। দুই সংস্থারই দাবি, তাদের ভ্যাকসিনের প্রভাব কার্যকর প্রমাণ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন তৃতীয় স্তরের সবচেয়ে বড় ট্রায়াল করছে মডার্না বায়োটেকনোলজি। যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবীকে ভ্যাকসিনের ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। মডার্না জানিয়েছে, তৃতীয় পর্বের ট্রায়ালের রিপোর্ট ক্রমেই ভালোর দিকে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় খবর হলো ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের শরীরেও ভ্যাকসিনের ডোজে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে, কমবয়সীদের চেয়েও কয়েকজন প্রবীণ স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির সংখ্যা অনেক বেশি।অন্যদিকে, ফাইজার জানিয়েছে, জার্মান সংস্থা বায়োএনটেকের সহযোগিতায় ভ্যাকসিনের সুরক্ষা ও কার্যকারীতা নিশ্চিত করা গেছে। প্রায় ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে ভ্যাকসিনের ইনজেকশন দিয়ে কোনো ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। আরো বেশি স্বেচ্ছাসেবীর ওপর এখন ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয়েছে। আগামী মাসের (অক্টোবর) মধ্যেই সেফটি ট্রায়ালের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) রেগুলেটরি কমিটির কাছে। এরপর এফডিএ সবুজ সংকেত দিলেই ভ্যাকসিন চলে আসবে দ্রুত।

Share.