করোনা: মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় সম্পর্কে নির্দেশনা

0

ঢাকা অফিস: মসজিদে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজে অনধিক পাঁচ জন এবং জুমার নামাজে অনধিক ১০ জন শরিক হতে পারবেন। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। সোমবার জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে অন্য ধর্মের অনুসারীদেরও উপাসনালয়ে সমবেত না হয়ে নিজ নিজ বাসস্থানে উপাসনা করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই আদেশ অমান্য করলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে মসজিদের ক্ষেত্রে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমগণ ব্যতীত অন্য সকল মুসল্লিকে নিজ বাসস্থানে নামাজ আদায় এবং জুমার জামাতে অংশগ্রহণের পরিবর্তে ঘরে জোহরের নামাজ আদায় করতে হবে। মসজিদে জামাত চালু রাখার প্রয়োজনে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম মিলে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজে অনধিক ৫জন এবং জুমার জামাতে অনধিক ১০ জন শরিক হতে পারবেন। জনস্বার্থে বাইরের মুসল্লি মসজিদের ভেতরে জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। অর্থাৎ কোন মসজিদে খাদেমের সংখ্যা বেশি হলেও ওয়াক্তের নামাজে ইমামসহ পাঁচজন অংশ নিতে পারবেন। আর জুমার নামাজে এই সংখ্যা ১০ জনের বেশি হতে পারবে না। সাধারণ মুসল্লিদের কেউ মসজিদে জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। বিশ^ব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে মক্কা এবং মদিনায় জারি করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের সকল দেশে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত শুক্রবার পাকিস্তানে জুমার নামাজের দিন মুসল্লিদের নিরুৎসাহিত করতে কার্ফু জারি করা হয়েছে। সঙ্কটময় পরিস্থিতেতে পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে এখন সাধারণ মানুষের যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেখানে এত দিন ইসলামী ফাউন্ডেশন কেবল সতর্কভাবে নামাজ আদায় করার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে আসছিল। কিন্তু করোনার সামাজিক বিস্তৃতি রোধে সঙ্গরোধের কথা বলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের কয়েকটি জায়গাতে তবলিগ জামাতে যাওয়া মুসল্লিদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের খবর এসেছে। এই পরিস্থিতিতে মসজিদে স্বাভাবিক জামাত চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের প্রতি বিবেচনার দাবি জানিয়ে আসছিল ইসলামী চিন্তাবিদরা। আলেমরা এই পরিস্থিতিতে মসিজেদে না যাওয়ার জন্য সাধারণ মুসল্লিদের আহ্বান জানিয়েছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সারাদেশে কোথাও ওয়াজ মাহফিল, তাফসির মাহফিল, তাবলিগী তালিম বা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা যাবে না। সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে তিলাওয়াত, জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্র রহমত ও বিপদ মুক্তির প্রার্থনার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইতোমধ্যে মুসলিম মনিষীদের অভিমতের ভিত্তিতে পবিত্র মক্কা মুকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারাসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের মসজিদে মুসল্লিদের আগমন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ এ রোগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সর্বসাধারণের আগমন বন্ধ রাখার জোর পরামর্শ দিয়েছেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলেমগণসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে পরামর্শক্রমে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এই আদেশ জারি হওয়ার পর সোমবার আছর নামাজের আজানের পর ঢাকার বিভিন্ন মসজিদ থেকে ঘরে নামাজ আদায় করতে সাধারণ মুসল্লিদের অনুরোধ জানিয়ে ঘোষণা দিতে শোনা গেছে। ওই ঘোষণায় বলা হয়েছে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ইসলামী ফাউন্ডেশন সূত্র বলছে ইতোমধ্যে দেশের সব মসজিদে জারি করা বিজ্ঞপ্তি পৌঁছেছে। আর রেডিও টেলিভিশন এবং অন্য সংবাদমাধ্যম প্রচার করেছে। এতে সকলে সরকারের এই সিদ্ধান্ত জেনে গেছেন। এরপর কেউ বিষয়টি জানেন না এমন উল্লেখ করে আদেশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। করোনাভাইরাস মানুষের হাঁচি, কাশি, নিশ্বাসের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে সংক্রমিত হয়। সংক্রমিত হওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে রোগের উপসর্গ প্রকাশ না পেলেও সংক্রমিত ব্যক্তির মাধ্যমে নতুন কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। অনেকের মধ্যে ভাইরাসটি সুপ্ত অবস্থায় থাকে। যার কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কিন্তু তিনি নতুন কাউকে আক্রান্ত করতে পারেন। সঙ্গত কারণে সচেতনভাবে সাবধান হওয়া ছাড়া ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কোভিড-১৯ নামের এই ভাইরাসের কোন স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি না থাকায় প্রায় ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সঙ্গত কারণে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সোমবার দেশে নতুন করে আরও ৩৫ জন ভয়ঙ্কর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

Share.