ডেস্ক রিপোর্ট: দেশ জয়ের পর এবার জনগণের মন জয়ে মগ্ন তালেবান। পাশাপাশি বিশ্বের কাছেও নিজেদের ‘সম্প্রীতির ভাবমূর্তি’ তুলে ধরার চেষ্টা করছে তারা। কিন্তু তালেবান সম্পর্কে মানুষের যে ধারণা, তা রাতারাতি পালটে দেওয়া অত্যন্ত কঠিন হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। জনগণকে নিরাপত্তা দিতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছে তালেবান।কিন্তু অনেক বাসিন্দা এতে উলটো বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। এদিকে আফগানিস্তানে ভিন্নমতের লোকজনের ওপর তালেবানের দমনপীড়নের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। ৯/১১ হামলার ২০তম বার্ষিকীতে অন্তর্বর্তীকালীন নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠান বাতিল করেছে তালেবান। খবর রয়টার্স ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের। ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের পর থেকে তালেবান সদস্যরা যুদ্ধের পোশাক পরে রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে। কাবুলের অনেক বাসিন্দাই এমন দৃশ্য দেখতে অভ্যস্ত নয়। কঠোর হাতে তালেবানের নিরাপত্তা রক্ষার কৌশল সেখানে কোনো কাজে আসছে না।কাবুলের শিক্ষক আহমদ ২০ বছর আগে তালেবানের প্রথম শাসনামলে ছিলেন ছোট্ট শিশু। তিনি বলেন, কাবুলের মানুষ তালেবান যোদ্ধাদের ঘৃণা করে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা এই যোদ্ধারা দেখতে বন্য, নোংরা, লম্বা চুল ও নোংরা পোশাকের অশিক্ষিত মানুষ। তারা কোনো ভদ্রতা জানে না।শহরের আরেক বাসিন্দা জানান, তালেবানের শরিয়া আইনানুযায়ী কাবুলে এখন কেউ কেউ দাড়ি রাখা কিংবা পশ্চিমা পোশাক ছেড়ে দেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরছেন নিতান্ত অনিচ্ছায়, কেবল তালেবানের ভয়ে কিংবা হয়তো কোনো তালেবান তল্লাশিকেন্দ্র পার হওয়ার জন্য। অবশ্য তালেবান নেতারা বলছেন, তারা চান কাবুলবাসীরা নিরাপদবোধ করুক। কিন্তু নেতারা এও স্বীকার করছেন যে, অপ্রত্যাশিত দ্রুততায় পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের পতন হওয়ার কারণে ৫০ লাখ মানুষের শহর কাবুল পরিচালনার জন্য পরিকল্পনার কোনো সময় তারা পাননি।তাদের বেশিরভাগ সদস্য বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধ করতে অভ্যস্ত। জনগণকে নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ প্রশিক্ষণ তাদের নেই।কাবুলের পুলিশ জেলা-৬ এর তালেবান টহল কমান্ডার সৈয়দ রহমান হায়দারি বলেন, কোনো এলাকায় সমস্যা হলে, কোথাও চুরি-ডাকাতি অথবা কোনো বন্দুকধারী হামলা চালালে বা অন্য যে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে জনগণকে তা আমাদের কাছে জানাতে বলা হয়েছে।আমরা সব জায়গায় আমাদের নম্বর দিয়েছি। অপরাধীদের গ্রেফতারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব। তিনি বলেন, মানুষের মনে কোনো ভয় থাকা উচিত নয়। আমরা দিন-রাত তাদের সেবায় নিয়োজিত আছি। কিন্তু তালেবানের এই বার্তা কেউ কেউ বিশ্বাস করতে চাইছে না। একটি মিডিয়া গ্রুপে কাজ করা ২২ বছর বয়সি আয়েশা জানান, তিনি তালেবান যোদ্ধাদের অনেক নারীকে পেটাতে দেখেছেন। তাই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তিনি বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। তার ভাষায়, তালেবান যোদ্ধারা বিপজ্জনক মানুষ।তারা নারীদের পেটায়, অপমান করে। তাদের নেতারা কী বলছেন তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। তারা একেবারেই বন্য। তবে কিছু কিছু আফগান কাবুলে তালেবানের কঠোর ব্যবস্থায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন।তাদের মতে, কাবুলে সম্প্রতি অপহরণ, খুন এবং সহিংস ডাকাতি বেড়ে গিয়েছিল, তালেবান কাবুল দখলের পর সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। শহরের এক গাড়িচালক বলেন, আগে কাবুলে মোবাইল ফোনচোর খুব বেড়ে গিয়েছিল।এখন এমন চুরি আর তেমন দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া স্থানীয় কোনো পুলিশকেও ঘুষ দিতে হয় না।শনিবার তালেবানের সমর্থনে শোভাযাত্রা করেন কিছু নারী। কাবুলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তালেবানের প্রতি নিজেদের সমর্থন জানান তারা। এ কর্মসূচিতে প্রায় ৩০০ নেকাব পরিহিত নারী অংশ নেন।
তালেবানের দমনপীড়নের নিন্দা জাতিসংঘের : আফগানিস্তানে ভিন্নমতের লোকজনের ওপর তালেবানের দমনপীড়নের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। একই সঙ্গে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধে তালেবানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।শুক্রবার এক বিবৃতিতে সংস্থার মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, যারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছেন এবং যেসব সাংবাদিক এসব বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছেন, তাদের নির্বিচারে আটক করছে তালেবান। তাদের ওপর দমনপীড়ন বন্ধ করতে আমরা তালেবানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। শপথ অনুষ্ঠান বাতিল করল তালেবান : ৯/১১ হামলার ২০তম বার্ষিকীতে তালেবানের অন্তর্বর্তীকালীন নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। তালেবান সরকারের সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য ইনামুল্লাহ সামঙ্গানি এ তথ্য জানিয়েছেন।ইনামুল্লাহ এক টুইট বার্তায় বলেছেন, নতুন আফগান সরকারের অনুষ্ঠান আপাতত বাতিল করা হয়েছে। মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয়, সেজন্য ইসলামিক আমিরাতের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার একাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। যারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।আফগানিস্তান ছাড়লেন যুক্তরাষ্ট্রের আরও ৩২ নাগরিক : যুক্তরাষ্ট্রের আরও ৩২ জন নাগরিক আফগানিস্তান ত্যাগ করেছেন। ওয়াশিংটনের সহযোগিতায় শুক্রবার তারা আফগানিস্তান ছাড়েন।দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ইমিলি হর্নি জানান, কাবুল থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯ নাগরিক আফগানিস্তান ত্যাগ করেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আরও দুই নাগরিক এবং দেশটির ১১ স্থায়ী বাসিন্দা স্থলপথে আফগানিস্তান ছেড়েছেন।