ডেস্ক রিপোর্ট: মধ্যপ্রাচ্যের ধনী রাষ্ট্র কুয়েতে করোনা কাল হয়ে এসেছে গরীর-খেটে খাওয়া প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশির জন্য। এদের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রাইভেট জব, টেক্সি ড্রাইভার কিংবা দোকান কর্মচারী ছিলেন। তারা মুক্তভাবে এখানে সেখানে কাজ করতেন। কামাই-রোজগার যা হতো তা দিয়ে দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতেন, কিছু টাকা জমলে বাড়িতে পাঠাতেন। কিন্তু কুয়েতে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বিশেষত: মহামারি ঠেকাতে দেশটিতে লকডাউন শুরু হলে তাদের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। বেকার এই বাংলাদেশিরা এতদিন কোনো মতে চললেও এখন তারা চরম অর্থ-সংকটে। না মুখ ফুটে বলতে পারছেন, না সইতে পারছেন অবস্থা। সংকটে থাকা ওই মানুষজনের জন্য বাংলাদেশ সরকার দূতাবাসকে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল, কিন্তু সেটাও নাকী শেষ হয়ে গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোববার দূতাবাস ত্রাণ বিতরণ স্থগিত করে নোটিশ দিলে নেটিজেনরা সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন। উল্লেখ্য, কুয়েত সরকার প্রায় চার হাজার বাংলাদেশিকে ঢাকায় ফেরত পাঠাচ্ছে। তাদের একটি জায়গায় জড়ো করা হয়েছে। এখন কেবল বিমানে তোলার অপেক্ষা!
ত্রাণ বিতরণ সংক্রান্ত দূতাবাসের নোটিশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া
কয়েক ঘন্টা আগে ত্রাণ বিতরণ সংক্রান্ত নোটিশটি দূতাবাসের অফিসিয়্যাল ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়। দু’ঘন্টারও কম সময়ে ৫৮১ জন নোটিশটি শেয়ার করেন। ৫৬৩ জন এতে কমেন্ট বা মন্তব্য লিখেন, যার ৯০ ভাগই সমালোচনাধর্মী। ওই সব একেকটি কমেন্টে ১০-১২ জন করে লাইক বা কমেন্ট করেন। একটি কমেন্ট ছিল এমন- বুঝলাম না ২৫ লক্ষ টাকার ত্রাণ কবে কোথায় আর কাদেরকে দিলো? আমরা যারা সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে যাওয়ার জন্য ডকুমেন্টস জমা দিয়েছি তাদের অনেককেই একটা জায়গায় এনে রাখা হয়েছে, এখানে আমরা প্রায় ২-৩ হাজার বাংলাদেশী আছি, যারা খুব মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমাদেরকে ১২ তারিখ এখানে এনে রাখা হয়েছে, তখন থেকেই শুরু হয়েছে আমাদের ভোগান্তি। না দেয়া হচ্ছে পর্যাপ্ত খাবার, না দেয়া হয়েছে থাকার যোগ্য জায়গা। এমন পরিবেশে রাখা হয়েছে যেন কোন নোংরা বস্তি। একেক রুমে গাদাগাদি করে ২০-৫০জনকে রাখা হয়েছে। আর দুইটা স্টোর রুম আছে, যেখানে প্রতি রুমে প্রায় ২২০ করে ৪৪০ জন লোককে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। নাম মাত্র খাবার দিলেও অনেক সময়ই খাবারের সাথে পানি দেয়া হয় না। তার চেয়ে দুঃখজনক হলো আজ ৭ দিন অতিবাহিত হতে চললেও অ্যম্বাসির কোন লোক আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি, ত্রাণ দেয়া তো দূরের কথা। অথচ গতকালই ইন্ডিয়ান অ্যাম্বাসির লোক এসে ইন্ডিয়ানদেরকে তদারকি করে গেছে। খাবার দাবারও দিয়ে গেছে অথচ তারা এসেছে মাত্র দুই দিন। আর আমরা এক সপ্তাহ পার করতে চললাম। আমাদের অ্যাম্বাসির কারো চাদ মুখ খানা দেখতে পেলাম না। ত্রাণ কি তারাই তো লা পাত্তা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের ব্যাপারে তাদের দায়িত্বটা কী? ২৫ লক্ষ টাকার ত্রাণই বা কাদেরকে দিল বা টাকাগুলো কোথায় গেলো?
দূতাবাস কর্মকর্তার অনানুষ্ঠানিক ভাষ্য
কুয়েত সিটিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, অর্থেরর অভাবে খাদ্য সংকটে থাকা বাংলাদেশিদের মাঝে ত্রাণ কার্য চালাতে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। যা কুয়েতি মুদ্রায় ৯ হাজার ১০০ দিনার। ওই বরাদ্দ মতে একেক জনকে গড়ে সাড়ে ৭ দিনারের ত্রাণ সামগ্রী দেয়ার চিন্তায় ১২০০ লোকের একটি তালিকা করে দূতাবাস। ওই তালিকা ধরে এই ক’দিনে ৭-৮ শ লোকের মধ্যে বিতরণও করা হয়। ত্রাণে চাহিদা বেড়ে যাওয়া এটি বিতরণ অসম্ভব হয়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিতরণ শেষ হয়ে গেছে উল্লেখ করে নতুন বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত তা স্থগিতের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয় দূতাবাস। ওই কর্মকর্তা বলেন, ত্রাণের অফুরন্ত চাহিদা। বিভিন্ন জায়গা থেকে চাহিদাপত্র আসছে বানের পানির মত। দূতাবাসে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বাংলাদেশি নাম তালিকাভুক্ত করেছে। তাদের মধ্যে ১২০০ জনের হাতে পৌঁছবে বাংলাদেশ সরকারের বরাদ্দে প্যাকেটজাত করা ত্রাণ। বাকীদের জন্য উপস্থিত মুহুর্তে রেড ক্রিসেন্টের সহায়তা নেয়ার কথাবার্তা চলছে। কুয়েত রেড ক্রিসেন্ট প্রায় ২৫০০ জন বাংলাদেশিকে ত্রাণ দিতে পারে, প্রাথমিক অলোচনায় এমন আভাস মিলেছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ত্রাণ নিয়ে রীতিমত চাপে আমরা, দূতাবাস। ফেসবুকে বিতরণ স্থগিতের নোটিশ জারির পর প্রবাসীরা কমেন্ট শেয়ার করে অস্থির করে তুলছে। বুঝে না বুঝে গালাগালি করছে সবাই। যে পরিস্থিতিতে আমরা আছি তাতে রাষ্ট্রদূত ছাড়া কারও কথা বলা অনুমতি নাই। আপনাকে সব বলছি বিশ্বাস করে। জানি আপনি লিখবেন, কিন্তু দয়া আমার নামটা দিবেন না- এভাবেই নাম প্রকাশে মানা করেন ত্রাণ নিয়ে চাপে থাকা ওই কর্মকর্তা। বলেন, আপাতত যে কোনোভাবে ২০ হাজার বাংলাদেশির কাছে কমবেশি কিছু একটা ত্রাণ পৌঁছাতে হবেই। এ জন্য জরুরি বরাদ্দ লাগবে। অন্যথায় দূতাবাসের ওপর মানুষের ক্ষোভ বাড়বে। এ বিষয়ে কথা বলতে রাষ্ট্রদূতের হোয়ার্টসআপে বার্তা পাঠানোসহ দফায় দফায় চেষ্টা করলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সর্বশেষ: জনরোষ থামাতে বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে দূতাবাসের ফেসবুক পেজে ত্রাণ বিতরণ বিষয়ক দ্বিতীয় নোটিশ জরি করা হয়। সেখানে বিতরণ স্থগিতের ব্যখ্যা সংক্রান্ত আগের নোটিশের সংশোধনী এনে বিতরণ অব্যাহত আছে বলে উল্লেখ করা হয়।