ডেস্ক রিপোর্ট: কুয়েতে মানব পাচার ও মুদ্রা পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে ১১ জন বাংলাদেশি। তাদের সাক্ষ্যর ভিত্তিতে তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়েছে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কুয়েতের সংবাদমাধ্যম আরব টাইমসের খবরের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির সিআইডির কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার (১১ জুন) এমপি পাপুলকে নিয়ে মুশরেফ এলাকায় তার বাসায় যান। এসময় তার বাসার কার পার্কিং এলাকায় তল্লাসী করে করে একটি গাড়ি থেকে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের চেকবই জব্দ করেন।খবরে বলা হয়েছে, উদ্ধার হওয়া চেকবইগুলোতে গত তিন মাসে কুয়েত, বাংলাদেশ ও কানাডায় বড় অংকের আর্থিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি। ১১ বাংলাদেশির সাক্ষ্যর ভিত্তিতে পাপুলের মূর্তজা মামুন নামের এক বিশ্বস্ত কর্মচারীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।কুয়েতে পাপুলের প্রতিষ্ঠান মারাফী কুয়েতিয়া গ্রুপের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মূর্তজা মামুন। তিনি কানাডারও নাগরিক। মূর্তজা মামুন কাজী শহিদ পাপলুর লেনদেনের হিসাব রাখতেন বলে বিভিন্ন খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।এর আগে গত ৭ জুন পাপুলকে মুশরেফ এর আবাসিক এলাকা থেকে পাপুলকে গ্রেফতার করা হয়। কুয়েতে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে ১০০ জনেরও বেশি ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদিকে এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে প্রতিবছর ভিসা নবায়নের জন্য বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন সাক্ষ্য দেয়া ১১ বাংলাদেশি। আদালতে তারা সাক্ষ্য দেয়ার পর পাপুলের জামিন নাকচ করে দেয়া হয়।ওই ১১ জনের সবাই সাংসদের বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ আনার পাশাপাশি প্রতিবছর ভিসা নবায়নের জন্য বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। সাক্ষ্যে তারা পাপুলের সহযোগী মূর্ততা মামুনের জড়িত থাকার তথ্য উল্লেখ করলে আদালত তাকেও গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। এমপি পাপুলের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কাছে নতুন কোনো তথ্য নেই। মিডিয়ায় বিভিন্ন বিষয় দেখছি। কুয়েতের কাছ থেকে সরকারিভাবে এ ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।’তবে পাপুলের বিষয়ে কুয়েত সরকারের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে জানিয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কুয়েত থেকে আমাদের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছিলেন, কুয়েতের সরকারের কাছ থেকে তথ্য চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন। যেহেতু কুয়েতে এখন বন্ধ চলছে, তাই তিনি এ বিষয়ে চিঠির কোনো জবাব পাননি।’আরব টাইমসের খবরে বরা হয়েছে, গ্রেফতারের পর পাপুলকে জিজ্ঞাসাবাদে কুয়েতের সিআইডি কর্মকর্তারা আরও কিছু তথ্য পেয়েছেন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র যাচাই করছে সিআইডি।উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারিতে কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাস ও আরব টাইমসে প্রথম বাংলাদেশের কয়েকজন অভিযুক্ত মানব পাচারকারীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। সেখানে তিন জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং পুলিশ এসব মানব পাচারকারীকে ধরতে অভিযান চালিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ওই তিন জনের একজন ছিলেন কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল।খবরে বলা হয়, গ্রেফতার অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে অভিযান শুরুর আগেই পাপুল কুয়েত ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। কুয়েতে তার পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ মাস ধরে কর্মীদের বেতন দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করা হয়েছিল।কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির নিরাপত্তা বিভাগ বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যকে খুঁজছে যার অবৈধ ভিসার ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, ২০ হাজার বাংলাদেশিকে কুয়েতে পাচার করে ওই চক্রটি ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।এছাড়া কুয়েতে তার কোম্পানি যাতে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পায় সেজন্য বাংলাদেশের ওই সংসদ সদস্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ঘুষ হিসেবে ৫টি বিলাসবহুল গাড়ি উপহার দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। এ বিষয়ে কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম শনিবার বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে বলেন, কুয়েত সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাংসদ পাপলুকে তাদের হেফাজতে রেখেছে। গত শনিবারের পর থেকে একাধিকবার তার জামিনের চেষ্টা হয়েছিল। তবে জামিন হয়নি।
কুয়েতে পাপুলর বিরুদ্ধে ১১ বাংলাদেশির সাক্ষ্য, অভিযানে সিআইডি
0
Share.