খুলনায় বাস, লঞ্চ ও ট্রলার বন্ধ,বাধা পেরিয়ে বিএনপির সমাবেশ স্থলে নেতাকর্মীদের ঢল

0

বাংলাদেশ থেকে খুলনা প্রতিনিধি: বিএনপি নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিচ্ছে। দেশের জাতীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন এতদিন। দলটির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক মাঠে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। আজ দুপুর ২টায় খুলনার সোনালী ব্যাংক চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। খুলনায় বিএনপির এই সমাবেশ ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসনও। সমাবেশ ঘিরে গতকাল থেকে এক রকমের অবরুদ্ধ দশায় রয়েছে খুলনা। প্রথমে বাস বন্ধ হয়েছে, তারপর হঠাৎ বন্ধ হয়েছে লঞ্চ ও ট্রলার চলাচল। ফলে খুলনায় আসতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিকল্প চিন্তা করতে হয়, নিতে হয় নানা কৌশল। বালুভর্তি ট্রলার, ইজিবাইক, নৌকা, সিএনজি, মোটরসাইকেল, হেঁটেসহ বিভিন্নভাবে খুলনা শহরে আসছেন নেতা-কর্মীরা। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর ও মেহেরপুর থেকে নেতাকর্মীরা ট্রেনে খুলনায় আসেন। আর নড়াইল, সাতক্ষীরা, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা এলাকার নেতা-কর্মীরা ট্রলার, ইজিবাইকসহ নানা কৌশলে খুলনায় প্রবেশ করেন। এদিকে এভাবে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে মানুষকে। তবে বাস কেন বন্ধ তার কোনো সদুত্তর মেলেনি বিআরটিএ’র কাছ থেকে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশের কোথাও গাড়ি বন্ধের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা কিছু জানি না। কেউ আমাদের কাছে কোনো দাবি-দাওয়াও জানায়নি। মালিক শ্রমিকরা আমাদের বলে ধর্মঘট করে না। এদিক বাস-লঞ্চ বন্ধের মধ্যেই খুলনা নগরীর অন্যতম প্রবেশদ্বার রুপসা ফেরিঘাটও বন্ধ করা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার জন্য। শুক্রবার সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, খুলনার পথে পথে তারা আমাদের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। খুলনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র যে বাসায় অবস্থান করছে, সেইখানেও পুলিশ রেইড করেছে এবং ২৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা খবর নিয়েছি, খুলনায় সরকার নির্দেশ দিয়েছে- সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে আসা লোকজনকে পথে দেখামাত্র গ্রেপ্তার করতে। আবার কোনো বাধাই জনস্রোত ঠেকানো যাবে না বলেও দাবি করা হচ্ছে বিএনপির পক্ষ থেকে। বিএনপির ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা, প্রশাসনের শক্ত অবস্থান আর ক্ষমতাসীনদের সবর উপস্থিতি- সব মিলিয়ে সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন খুলনার পরিস্থিতি আজ কোন দিকে যাবে সেদিকে দৃষ্টি থাকছে মানুষের। এদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য ও অপপ্রচারের অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন গতকাল। শুক্রবার বিকেলে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন নেতা-কর্মীরা। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছেন সমাবেশকে বানচাল করতে বিভাগজুড়ে ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হয়েছে। পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লঞ্চঘাট, ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাহলে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, বাগেরহাট, নড়াইল থেকে কি বিএনপির নেতাকর্মীরা হেঁটে আসবেন? নদী সাঁতরে খুলনায় আসবেন? এ কেমন মানসিকতা? স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের নারী-পুরুষ-শিশু বুকের রক্ত দিয়েছিলেন। সেই দেশের এমন পরিস্থিতি হবে কেন? এদিকে সমাবেশ কেন্দ্র করে বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে ইতোমধ্যে দলটির হাজারো নেতাকর্মী খুলনায় এসেছেন। রাতে দলীয় কার্যালয়ে বালিশ-কাঁথা নিয়ে অবস্থান নেন হাজারো কর্মী-সমর্থক। তাদের বিভিন্ন স্লোগানে মুখর হয়ে হয় দলীয় কার্যালয়। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে পৌঁছান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সেখানে পৌঁছালে দলীয় কর্মীরা স্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানান।

Share.