শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৭

গলায় রশি প্যাঁচানোর আগে ছেলের বাঁচার আকুতি, স্ত্রী-কন্যা আগেই লাশ!

0

ঢাকা অফিস: বাবার কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল ছেলেটি। ১২ বছরের ছেলে ফারহান বাবার পা জড়িয়ে ধরেছিল। কিন্তু রেহাই দেননি পাষণ্ড বাবা। ছেলেকে যখন মারধর শুরু করেন, তখন ছেলেটি বাবার পা জড়িয়ে ধরে বলেছিল, ‘বাবা আমাকে মের না।’ বাবা যখন থামছেনই না, তখন ছেলেটি বলেছিল, ‘তুমি কি আমাকে মেরে ফেলবে নাকি?’ বাবার উত্তর, আমাদের সবারই চলে হতে হবে।  আমিও থাকবো না। তোমার মা, বোন চলে গেছে। সবার যেতে হবে বাবা। আজই যাবো।’ তারপর ছেলের গলায় রশি পেঁচিয়ে নির্মমভাবে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় ছেলেকে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর দক্ষিণখান থানার প্রেমবাগান এলাকার মনোয়ার হোসেনের বাড়ির চতুর্থ তলার একটি ফ্লাটে এই ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক রকিব উদ্দিন আহম্মেদ লিটন নিজেই খুন করেন ছেলে ফারহানকে। এর কিছুক্ষণ আগে স্ত্রী মুন্নী ও মেয়ে লাইবাকে খুন করেন তিনি। তারপর বাসা দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যান। ঘটনার দুইদিন পর ফ্লাট থেকে দুর্গন্ধ আসার পর পুলিশ এসে ভেতরে ঢুকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় দক্ষিণখান থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়। গত ৬ এপ্রিল লিটনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম। ৮ এপ্রিল তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। তিনি মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমানের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে খুনের বর্ণনা দেন।

স্ত্রী বিছানায় শুয়ে ছিলেন:স্বীকারোক্তিতে লিটন বলেন, অফিসের সহকর্মীসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে এক কোটি দশ লাখ টাকা সুদে টাকা ধার নেন। তিনি অনলাইনে জুয়া খেলতেন। জুয়া খেলতে খেলতে সব টাকা নষ্ট করে ফেলেন তিনি। ধারের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় প্রায়ই পাওনাদাররা বাসায় আসতেন। এ নিয়ে স্ত্রী মুন্নী প্রায়ই ঝগড়া করতেন। পারাবারিক ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকতো। তিনি এক সময় গাঢাকা দেন। ঘটনার আগের দিন তিনি বাসায় আসেন। টাকা দিতে না পারলে তার বিপদ হবে এই চিন্তা করেই সবাইকে খুন করে নিজে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে স্ত্রী মুন্নী বিছানায় শোয়া থাকা অবস্থায় লিটন একটি হাতুড়ি দিয়ে স্ত্রীর মাথায় বাড়ি মারেন। চিৎকার করে উঠলে তাকে আবারো বাড়ি মারেন। এরপর গলা টিপে ধরেন। এক সময় স্ত্রী মারা যান।

মেয়ে লাইবা টিভি দেখছিল: লিটনের স্বীকারোক্তি থেকে আরো জানা যায়, স্ত্রীর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি চলে যান ড্রয়িংরুমে। সেখানে গিয়ে দেখেন তিন বছরের মেয়ে লাইবা টিভি দেখছে। বাসার একটি রশি হাতে নেন লিটন। মেয়েকে টেনে রশি দিয়ে তার গলায় পেঁচিয়ে ধরেন। জোরে টান মারেন। মেয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সেও মারা যায়।

ছেলে দাদুর রুমে ঘুমিয়েছিল: ছেলে ফারহান তার দাদুর রুমে ঘুমিয়ে ছিল। মেয়েকে যে রশি পেঁচিয়ে খুন করেন, ওই রশিটিই সঙ্গে নিয়ে যান। বাবা ঘরে ঢুকতেই ছেলে জেগে যায়। ছেলের গলায় রশি পেঁচানের সময় ছেলে বাঁচার আকুতি জানায়। এরপর তাকে মারধর শুরু করেন বাবা। এক পর্যায়ে গলায় রশি পেঁচিয়ে হ্যাঁচকা টান মারেন। ছেলেটাও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

আত্মহত্যার চিন্তা না করেই ভেগে যান লিটন: লিটন স্বীকারোক্তিতে আরো বলেন, তিনজনকে মারার পর আর আত্মহত্যার চিন্তা আসেনি। ঘরের দরজা বন্ধ করে তিনি বেরিয়ে পড়েন। কিভাবে কোথায় তিনি চলে যান তা তার মনে নেই। তবে জ্ঞান ফেরার পর তিনি দেখতে পান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হ্নদরোগ হাসপাতালের ময়লার ভাগাড়ে তিনি। এর আগে কোথায় কোথায় ছিলেন তা তিনি বলতে পারেননি। গত ৬ এপ্রিল পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে। তিনি স্বেচ্ছায় এই স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন এবং তিনি জানেন তিনিও ফাঁসিতে ঝুলবেন। তিনি তাই-ই চান।

জীবনের সবই ভুল: জীবনে তিনি অনেক ভুল করেছেন। ভালো একটা চাকরি করতেন। মান-সম্মান সবই ছিল। কিন্তু জুয়ার নেশা তাকে অন্ধ করে ফেলেছিল। লিটন স্বীকারোক্তিতে বলেন, জুয়া খেলা সবচেয়ে বড় ভুল। আর অফিসের সহকর্মী ও অন্যদের কাছ থেকে সুদে টাকা ধার করা আরো ভুল। শুধু ভুল নয়, চরম অন্যায়। আরো বড় অপরাধ করে ফেলেছেন স্ত্রী, পুত্র, কন্যাকে খুন করে। তার খুব খারাপ লাগছে স্বীকার করে তিনি বলেন, এ বড় অন্যায়। আমি অনুতপ্ত। আমার বিচার হোক। আর কেউ যেন এমন অন্যায় না করে।

Share.