বাংলাদেশ থেকে পটুয়াখালী প্রতিনিধি: আমাদের দেশে প্রবাদ আছে সরকারি চাকরি নাকি সোনার হরিণ। অধিকাংশ বাবা-মায়ের স্বপ্ন থাকে তাদের সন্তান বড় হয়ে এই হরিণ শিকার করবে অর্থাৎ সরকারি চাকরিজীবি হবে। সরকারি চাকরি মানেই নিরাপদ নিশ্চিন্ত জীবন। এটাই আমাদের মধ্যবিত্ত বাঙালির অপরিবর্তনশীল ধারণা। এই ধারণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সরকারি চাকরির আশা ছেড়ে পটুয়াখালীতে হরেক রকমের চায়ের দোকান দিয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোঃ সাকুর। সাকুরের ধারণা স্মার্টভাবে গুছিয়ে করতে পারলে কোন কাজই ছোট নয়। সবাই যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে পড়াশুনা করে চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে বেকার ঘুরে বেড়ায়। সেখানে সাকুর পড়াশুনার পাশাপাশি এই হরেক রকমের চায়ের দোকান করে শিক্ষাজীবন শেষে ভালো অংকের একটি পুঁজি জোগার করতে সক্ষম হবে। সেই পুঁজি কাজে লাগিয়ে আরও ব্যবসা শুরু করবে এমনটাই স্বপ্ন সাকুরের৷ কথায় আছে মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন লেকের পাড়ে ‘চায়ের আড্ডা’ নামের এই স্পেশাল চায়ের দোকানে বর্তমানে তান্দুরী চা,স্পেশাল মালাই চা, পিনিক চা,কাজুবাদাম চা,চকলেট চা সহ মোট ৩০ রকমের চা পাওয়া যায়। তবে চা প্রেমীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পিনিক চা ও স্পেশাল মালাই চা। এই চায়ের দোকানে সর্বনিম্ন ১০ টা থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা মূল্যের চা পাওয়া যায়। চা খেতে আসা একজন চা প্রেমী রুবাইয়েত মেহেদী। তিনি বলেন, পটুয়াখালীতে হরেক রকমের চায়ের দোকান এই প্রথম। চা প্রেমীদের জন্য অনেক বড় সুখবর এটি৷ প্রতিনিয়ত লাল চা আর দুধ চা খেতে আমাদের রুচি নষ্ট হয়ে গেছে। এবার রুচি পরিবর্তনের সুযোগ এসেছে। আরও একজন চা প্রেমী সাওদার সাথে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, এত কম টাকায় এতো স্পেশাল হরেক রকমের চা পটুয়াখালীতে খাওয়া যাবে তা ভাবতে পারিনি। ঢাকা-বরিশালে দেখেছি তবে পটুয়াখালীতে এই প্রথম। আইডিয়াটা সত্যি অনেক ভালো হয়েছে৷ কাস্টমারের কাছে কেমন চাহিদা রয়েছে এই হরেক রকমের চায়ের- এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাকুল বলেন, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত খুব ভালো রেসপন্স পাচ্ছি৷ আর বিশেষ করে যারা চা প্রেমী তারা খুব ভালো রেসপন্স দিচ্ছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত অব্দি কাস্টমারের চাপ বেশি থাকে। চায়ের দোকানী শিক্ষার্থী মোঃ সাকুর এ বছর লতিফ মিউনিসিপ্যাল সেমিনারী বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করে পটুয়াখালী আব্দুল করিম মৃধা কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছে। সাকুরে বাসা পটুয়াখালী পৌর শহরের বি-টাইপ বাজারের পাশে। দুই ভাই বোনের মধ্যে সাকুর বড়। তার বাবা মোঃ সিদ্দিকুর রহমান একজন সরকারি চাকরিজীবি। বাবা সরকারি চাকরিজীবি হলেও সাকুরের ছোটবেলা থেকেই চাকরির বিষয়ে কোন ইচ্ছে ছিলো না। সবসময়েই সে চেয়েছে নিজে কিছু করবে৷ আর সেই চিন্তা থেকেই আজকের এই স্পেশাল চায়ের দোকান। সাকুর বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমান বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছে আর সরকারি চাকরির পেছনে লাইন দিচ্ছে তারা যদি প্রত্যেকে তাদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে নিজেরা কিছু করতো তবে বেকারত্বের হার অনেকটাই কমে যেতো আর আমাদের দেশও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতো। কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হতো। আমি ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখেছি নিজে কিছু করবো। চাকরির পেছনে ছুটবো না। আমি পড়াশুনা শেষ করে আরও ব্যবসা করবো বলে ভাবছি। এতে করে আমি নিজেও সাবলম্বী হতে পারবো পাশাপাশি অনেক বেকার যুবক-যুবতীদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস। এখন যৌবন যার, তার যুদ্ধে যাবার সঠিক সময়। তাই এখন থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর যুদ্ধটা শুরু করেছি। সবাই যখন পড়াশুনা শেষ করে চাকরি খুঁজবে আমি তখন সকলের দোয়া ও সমর্থন থাকলে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যাবো।
চাকরির আশা বাদ দিয়ে শিক্ষার্থী সাকুর’র ৩০ রকমের চাস্পেশাল চায়ের দোকান
0
Share.