চার বছরের মাথায় কেন আবার ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন গড়ছে তুরস্ক!

0

 ডেস্ক রিপোর্ট: ফিলিস্তিনের নাগরিকদের ওপর সহিংসতার জেরে ইসরায়েলের সঙ্গে চার বছর আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছিল তুরস্ক। কিন্তু রাজনৈতিক ও সামরিক কারণে উভয় দেশ পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে অর্থনীতি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। আগামী বছর আধুনিক তুরস্কের শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। একইসঙ্গে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। ফলে নিশ্চিতভাবেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তার প্রায় দুই দশকের শাসনকালের মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী যে খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে, তার আঁচ লেগেছে তুরস্কের অর্থনীতিতেও। বর্তমানে দেশটিতে রেকর্ড ৭০ শতাংশের বেশি মুদ্রাস্ফীতি বিদ্যমান। এত বেশি মুদ্রাস্ফীতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে এরদোয়ানের সরকার। এছাড়া, অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য তুরস্কের নতুন বিনিয়োগ প্রয়োজন। বর্তমানে প্রতি বছর অন্তত পাঁচ লাখ ইহুদি তুরস্কে বেড়াতে যান। আর তুরস্ক বছরে অন্তত চার বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ইসরায়েলে রপ্তানি করে। আমদানির পরিমাণও বছরে গড়ে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। আর উভয় দেশ ১৯৯৭ সাল থেকে মুক্তবাণিজ্য চুক্তিতে বাণিজ্য করছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে আঞ্চলিক নিরাপত্তাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কারণ তুরস্কের জন্য সিরিয়া ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। এ ঝুঁকি মোকাবেলায় ইসরায়েলকে শক্ত খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করছে তুরস্ক। অন্যদিকে ইসরায়েলও নিজেদের স্বার্থে তুরস্কের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে আগ্রহী। কারণ ইরানের হুমকি মোকাবেলায় তুরস্ককে মিত্র হিসেবে চাইছে ইসরায়েল। এছাড়া, পাইপলাইনে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহে তুরস্ককে দরকার ইসরায়েলের। ইসরায়েলের হাতে প্রায় দুই থেকে তিন ট্রিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস আছে। এ থেকে বছরে ১০ বিলিয়ন ঘনমিটার বিক্রি করে ৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারবে তারা। এক্ষেত্রে, তুরস্ককে কম মুনাফা দিলেও হবে। আর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মিত্রদেশগুলোও এ নতুন পাইপলাইন নির্মাণে আগ্রহী। এর ফলে রাশিয়ার উপর থেকে নির্ভরতা কমবে। ইসরায়েলের সঙ্গে তুরস্কের মিত্র সম্পর্ক থাকলে ইরান ছাড়া আশপাশের অঞ্চলে আর কোনো শক্তিশালী দেশ রাজনৈতিক কারণে তাকে কটুকথা শোনানোর মতো থাকবে না। পাশাপাশি ভারতের পর তুরস্ক হচ্ছে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সমরাস্ত্র ক্রেতা। ফলে ত্রুস্কের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে ইসরায়েল। উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় প্রতিস্থাপন হলে ফিলিস্তিন ইস্যুতে তুরস্ক নিরব ভূমিকা পালন করবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যদিও এসব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু। তিনি জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রক্ষায় সর্বদা কাজ করবে তুরস্ক। ২০১৮ সালে গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনে নাগরিকদের প্রতিবাদের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের হামলা ও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুজালেমে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে ভ্রমণকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল থেকে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে তুরস্ক। বিপরীতে ইসরায়েলও তুরস্ক থেকে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে। তবে ইসরায়েলের নতুন এ সিদ্ধান্তে বিস্মিত নন বিশ্লেষকরা। কারণ মুসলিম-প্রধান দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কই প্রথম ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। এমনকি ২০০৫ সালে এরদোয়ান ইসরায়েল সফর করেছিলেন। তখন সাবরা-শাতিলা গণহত্যার খলনায়ক কুখ্যাত এরিয়েল শ্যারনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। ১৯৮২ সালের ১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লেবাননের দুই শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি সেনাদের পাশবিক গণহত্যা অভিযানে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিলেন। ওই দুই শরণার্থী শিবিরে প্রায় ২০ হাজার অধিবাসী ছিল। সাবেক ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল শ্যারন ওই সময় ইসরাইলের ভারপ্রাপ্ত যুদ্ধমন্ত্রী ও লেবাননে মোতায়েন ইহুদিবাদী বাহিনীর কমান্ডার ছিল এবং সে সাবরা ও শাতিলা গণহত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেন। ফলে আগামী বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুনভাবে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে আগ্রহী হয়েছে তুরস্ক।

Share.