ডেস্ক রিপোর্ট: সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে চীনের আচরণ নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইলেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সবসময় নীরব থাকতে দেখা যায়। ভারত অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে সরব ইমরান খান উইঘুর নিপীড়নে নীরব ভূমিকা পালন করে বিভিন্ন সময় সমালোচনার মুখোমুখিও হয়েছেন। তার এই নীরবতার ব্যাপারে সুইজারল্যান্ডসের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডি ডব্লিউকে দেয়া স্বাক্ষাৎকারে বলেছেন, বেইজিং আমাদের ভালও বন্ধু এবং অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদকে সহায়তা করেছে। ডি ডব্লিউকে দেয়া তার ওই স্বাক্ষাৎকারে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে কথা বললেও উইঘুর মুসলিমদের নিপীড়নের ব্যাপারে ইমরান খান বলেন, চীন অত্যন্ত স্পর্শকাতর। যে কারণে ইসলামাবাদ তাদের সঙ্গে উইঘুর ইস্যু নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলে। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ভারতের কড়া সমালোচনা করলেও উইঘুর মুসলিম নিপীড়নে কেন তাকে সেভাবে কথা বলতে দেখা যায় না; এমন এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, এর পেছনে প্রধানত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, ভারতে যা হচ্ছে তার সঙ্গে চীনের উইঘুরদের বিষয়টি তুলনা করার মতো নয়। দ্বিতীয়ত, চীন আমাদের দুর্দান্ত এক বন্ধু। আমার সরকার যখন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতি পার করছিল; সেই সময় চীন আমাদের সহায়তা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা উইঘুর নিয়ে চীনের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি, প্রকাশ্যে নয়। কারণ এই ইস্যুটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কঠোর দমন-পীড়নের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন সময় ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে চীন। দেশটির বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের গণ-বন্দি শিবিরে আটক, ধর্মীয় কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ এবং বলপ্রয়োগপূর্বক পুনর্শিক্ষা কেন্দ্রে পাঠানোর অভিযোগ আছে। কিন্তু এই ইস্যুতে বরাবরই নীরব থাকার নীতিতে চলেছে পাকিস্তান। গত বছরের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে ভারত। কাশ্মীর উপত্যকার মুসলিমদের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগের পাশাপাশি ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকিও দিয়ে আসছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী নিজেকে কাশ্মীরি জনগণের দূত হিসেবে অভিহিত করেন। কিন্তু উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে চীনের নিপীড়নের নীতির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, তার নিজ দেশের ভেতরে অনেক সমস্যা আছে। কাশ্মীর নিয়ে ইমরান খানের যে ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা যায়, তাকে গত বছর চীনের উইঘুরদের ব্যাপারে একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করার আহ্বানও জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে চীন যে ধরনের নিপীড়ন চালাচ্ছে সেটাকে ‘শতাব্দির কলঙ্ক’ বলেও অভিহিত করেছে ওয়াশিংটন। চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস। তাদের বিরুদ্ধে চীন সরকার কঠোর অভিযান পরিচালনা করছে বলে বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো নিন্দা প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, চীন সরকার কমপক্ষে ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে জিনজিয়াংয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে আটকে রেখেছে। চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় এই প্রদেশে অন্তত এক কোটি সংখ্যালঘু উইঘুরের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ তুর্ক মুসলিম। সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় নিপীড়ন এবং বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এই মুসলিমরা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ চীন সরকারের বিরুদ্ধে জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনে পদ্ধতিগত অভিযান পরিচালনার অভিযোগ করেছে। একই সঙ্গে উইঘুরদের বিরুদ্ধে চীনের নিপীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
চীনে মুসলিম নিপীড়নের জবাব দিলেন ইমরান খান
0
Share.