জলবায়ুর অবিচার দূর করার সময় এখনই

0

ঢাকা অফিস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ুর ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষয়-ক্ষতি রোধের উপায় খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক কার্বন বাজার উন্মুক্তকরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বিখ্যাত ‘ডিপ্লোম্যাট’ ম্যাগজিনে প্রকাশিত তার লেখা ‘ঢাকা-গ্লাসগো সিভিএফ-সিওপি২৬ সংহতি জোরদার’ শীর্ষক এক নিবন্ধে তিনি এ গুরুত্বারোপ করেন।ম্যাগাজিনটির এপ্রিল ২০২১ সংখ্যায় প্রকাশিত এ নিবন্ধে শেখ হাসিনা প্রকৃতির বিরুদ্ধে এ যুদ্ধকে অর্থবহ করে তুলতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। নিবন্ধে তিনি আরও লেখেন, কান্তিকালীন জলবায়ু সহযোগিতা জোরদার এবং ক্ষয়ক্ষতি ও জলবায়ুর অবিচার রোধের উপায় খুঁজে বের করতে আমরা উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক কার্বন বাজার দেখতে চাই।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি হিসাবে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের মতো সিভিএফের প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রেরই বলার মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির কথা রয়েছে। কিন্তু এসব দেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে খুব কমই ভূমিকা রাখছে। জলবায়ুর এ অবিচার দূর করার সময় এখনই।প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রকৃতির বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে সবাই এক জোট না হলে আমরা হেরে যাব। তিনি আরও বলেন, আমরা জলবায়ু তহবিল অবমুক্ত দেখতে চাই। আর তা শুধু কম কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর জন্যে নয় বরং অঙ্গীকারকৃত ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড় এবং এর ৫০ শতাংশ জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা তৈরির জন্য ব্যয় করা হোক।তিনি বলেন, সিভিপি বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১শ কোটিরও বেশি লোকের প্রতিনিধিত্ব করছে। সমুদ্র স্তরের সামান্য উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় ও দ্রুত মরুকরণের কারণে এদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। তিনি বাংলাদেশের কথা তুলে ধরে বলেন, এ দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর ক্ষেত্রে প্রায়শই ‘গ্রাউন্ড জিরো’ হিসাবে উল্লিখিত হয়। এখানে জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের কোটি কোটি সাহসী ও সহিষ্ণু জনগণের অস্তিত্বের লড়াই যাদের বাড়িঘর, জমি ও শস্য প্রকৃতির ধ্বংসাত্মক ক্রোধে ধ্বংস হচ্ছে।তিনি তার লেখায় আরও বলেন, প্রতি বছর জিডিপির ২ শতাংশ চরম জলবায়ুর প্রভাবজনিত কারণে ব্যয় হয়। শতাব্দী শেষে এটি ৯ শতাংশে দাঁড়াবে। তিনি উল্লেখ করেন, ২০৫০ সাল নাগাদ উপকূলীয় ১৭ শতাংশেরও বেশি এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এতে ৩ কোটি লোক বাস্তুচ্যুত হবে।শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতোমধ্যে ৬০ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া, কক্সবাজারের পরিবেশ বিপর্যয়ের মূল্য দিয়ে এ দেশ এখনো মিয়ানমার থেকে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দানের চাপ বহন করছে। এ ক্ষয়ক্ষতির মূল্য কে দেবে? প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ুর ওপর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়টিকে প্রাধান্য না দেয়ায়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তিতে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক তহবিল গঠনের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল- তা থেকে অর্থায়ন অনেক কম হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে কম কার্বন নিঃসরণ প্রকল্পগুলোতে সহায়তা করতে কার্বন-মার্কেটে আর্থিক সহায়তা দিতে জি-২০ সদস্য দেশগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। আর যেখানে কার্বন নিঃসরণ কমাতেই এদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে, সেখানে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করা তো অনেক দূরের ব্যাপার। এ জি-২০ সদস্য দেশগুলোই শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের এ বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাতটি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো এসে পড়েছে। এর ফলে এখন বিশ্ববাসীর সামনে তিনটি মারাত্মক সমস্যার উদয় হয়েছে- জলবায়ু, স্বাস্থ্য ও প্রকৃতি। শেষ পর্যন্ত একটি অত্যন্ত কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হয়ে বিশ্ব নেতৃত্ব আমার এ সতর্কবার্তা আমলে নিতে বাধ্য হয়েছে যে- জলবায়ু সংকট একটি অত্যন্ত গুরুতর ও জরুরি সমস্যা।মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্যারিস চুক্তিতে ফিরে আসাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উৎসাহব্যঞ্জক হিসাবে অভিহিত করেন। তিনি আরও বলেন, কিন্তু যারা সিভিএফের মধ্যরাতের ডেডলাইন পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন, আমি তাদের প্রতি কপ২৬-কে সামনে রেখে উচ্চাভিলাষী এনডিসি অবদান রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। বার্বাডোস, কোস্টারিকা ও মালদ্বীপসহ সিভিএফের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সদস্য-রাষ্ট্রসমূহ ২০৩০ সাল নাগাদ শূন্যের কাছাকাছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিভিএফ সদস্য-রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে জনবহুল দেশ। বাংলাদেশ মিথেন নিঃসরণ হ্রাসে প্যারিস চুক্তির শর্তাবলী পূরণের পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন এনডিসি হালনাগাদ করেছে।জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাওয়ার ব্যাপারে তার সরকারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরেই চ্যাম্পিয়ন হিসাবে অভিহিত করে তিনি বলেন, এর মূল কৃতিত্ব বিশেষত নারী ও তরুণদের।প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি শক্তিশালী সিভিএফ-সিওপি সংহতি গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। নভেম্বরের সম্মেলনে আমরা একটি ঢাকা-গ্লাসগো-সিভিএফ-কপ২৬ ঘোষণা চাই। আমরা জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো কপ২৬ এর আগেই জি২০ দেশগুলোর পক্ষ থেকে উচ্চাভিলাষী এনডিসিএস শর্ত পূরণ দেখতে চাই।

Share.