জাতি পিলখানা ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

0

ঢাকা অফিস: পিলখানা বিদ্রোহের মতো ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ—বিজিবির সদস্যদের শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালে পিলখানায় হত্যাযজ্ঞকে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, জাতি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকার গঠনের মাত্র ৫২ দিনের মাথায় ২০০৯ সালে একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে (তৎকালীন বিডিআর)।পুরো জাতি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না।’ রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের অভ্যন্তরে বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে মঙ্গলবার সকালে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের হাতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। এ ঘটনার পর বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) করা হয়। পিলখানা বিদ্রোহের ঘটনায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী। বিজিবি সদস্যদের শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড বজায় রাখার নির্দেশ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘চেইন অব কমান্ড বজায় রাখা যে কোনো সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা কথা মাথায় রাখবেন। কখনও শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। অর্পিত দায়িত্ব মেনে চলবেন, চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন।’ শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি কর্তব্যনিষ্ঠ হওয়ার জন্য তিনি বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে ১৯৭৪ সালের ৫ই ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের সদস্যদের উদ্দেশে দেয়া জাতির পিতার ভাষণের চুম্বকাংশ উদ্ধৃত করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন—‘ঈমানের সাথে কাজ কর; সৎ পথে থেকো, দেশকে ভালোবাস।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই দেশ আমাদের, দেশ যত উন্নত হবে আপনাদের পরিবারই ভাল থাকবে, সুস্থ থাকবে। উন্নত জীবন পাবে, শিক্ষা-দীক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানসহ সবধরণের সুযোগ পাবে। সে কথা সবসময় মনে রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বর্ডার গার্ড আইন ২০১০ পাশের পর এই বাহিনীকে আমরা আধূনিক ও যুগোপযোগী করে গঠন করেছি। আমার বিশ্বাস আধুনিক সীমান্ত রক্ষী বাহিনী হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার লক্ষ্য অর্জনে।’ একটি পেশাগত ও সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, যে কোনো পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশৃঙ্খল ও দক্ষ বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। বিজিবি সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সাতকানিয়ার বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’ ‘জাতির পিতা যেভাবে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন আজকে আওয়ামী লীগ সরকার সেই পদক্ষেপই নিয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি গৃহহীন-ভূমিহীনদের বিনামূল্যে ঘর এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে একটি মানুষও ভুমিহীন-গৃহহীণ থাকবে না, ইনশাল্লাহ। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটা মানুষের জন্য একটা ঠিকানা গড়ে দেয়ার পাশাপাশি সকলের হাতে আজকে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট সার্ভিস, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন, ফ্রিল্যান্সিং, তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সর্বক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। যে দেশকে জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে গিয়েছিলেন। আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকালিনই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা আমাদের ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।’ করোনাভাইরাস আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নিষেধাঞ্জা ও পাল্টা নিষেধাঞ্জার ফলে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়টি তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশে যাতে এই মন্দা না আসে সেজন্য আমাদেরকেই তার ব্যবস্থা নিতে হবে। কারো কাছে হাত না পেতে নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করে আমরা নিজেরা নিজেদের মতই চলবো, মাথা উঁচু করে চলবো।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই কারণেই আমি আহবান করেছি এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে, প্রতিটি ইঞ্চিতে যে যা পারেন তা উৎপাদন করবেন। প্রতিটি বিওপিতেই আমাদের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা কিছু না কিছু উৎপাদন করছেন বা পশু পাখি পালন করছেন। আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাই।’ জাতির পিতার স্বপ্ন পূরনের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ই-ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করবে।’ দেশকে আরো এগিয়ে নিতে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান অর্থাৎ এই ভূখন্ড এই ব-দ্বীপ অঞ্চলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন উন্নত জীবন পেতে পারে সেই পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। সে জন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের কাজও আমরা শুরু করেছি।’

Share.