ঢাকা অফিস: ‘জুয়া খেলার টাকা’র জন্য নবজাতক কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক বাবার বিরুদ্ধে। তার নাম ফারুক ভুঁইয়া। গত বুধবার (২০ নভেম্বর) কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার মসুয়া ইউনিয়নের রামদী গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। কটিয়াদী মডেল থানার ওসি এমএ জলিল বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে জুয়ার টাকা যোগাতেই শিশু কন্যা রাধিয়াকে বিক্রি করেছিল ফারুক। জুয়ার নেশায় সে এমন নির্মমতার পথ বেছে নিয়েছিল। পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে সে জানিয়েছে, ডাক্তার দেখানোর কথা বলে কৌশলে মায়ের কোল থেকে রাধিয়াকে নিয়ে এসেছিল। পরে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে অপহরণের নাটক সাজায়। তার দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী মসুয়া ইউনিয়নের বেতাল গ্রামের সুমন ভূইয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে রাধিয়াকে উদ্ধার ও সুমনের স্ত্রী জাকিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।’ পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ নভেম্বর কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার একটি ক্লিনিকে রিনা খাতুনের কোল আলো করে জন্ম নেয় তাদের সংসারের তৃতীয় সন্তান। ফুটফুটে কন্যা শিশুটির নাম রাখা হয় রাধিয়া। মায়ের আদর ভালোবাসায় একটু একটু পূর্ণতা পেতে শুরু করে শিশু কন্যাটি। এরই মাঝে পেরিয়ে যায় ১৪ দিন। রাধিয়ার জ্বর হলে বাবা ফারুক ভূইয়া ডাক্তার দেখানোর কথা বলে তাকে বাড়ি থেকে বাইরে নিয়ে যান। অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর ফারুক রাধিয়াকে নিয়ে বাড়িতে না ফেরায়, চিন্তিত হয়ে পড়েন মা রিনা খাতুন ও পরিবারের লোকজন। কটিয়াদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী মো. মোস্তফা কামাল জানান, রিনা খাতুনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে রাধিয়ার বাবা ফারুক ভুঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তিনি জানান ৭০ হাজার টাকায় রাধিয়াকে বেতাল গ্রামের জাকিয়া আক্তারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। সেখান থেকে জাকিয়া আক্তারকে গ্রেফতার ও শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফারুক ভুঁইয়া ও জাকিয়া আক্তারকে গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) গ্রেফতারের পর আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাদের জেলা হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। রিনা খাতুন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, তার স্বামীর বাড়ি বনগ্রাম ইউনিয়নের বালিরা গ্রামে। রামদী গ্রামে তার বাবার বাড়িতে ১৪ দিন আগে রাধিয়ার জন্ম হয়। স্বামীর বাড়িতে তার বনিবনা না হওয়ায় বেশ কিছু দিন যাবৎ তিনি বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। গত বুধবার (২০ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টার দিকে নবজাতক রাধিয়াকে ডাক্তার দেখানোর জন্য তিনি হাসপাতালে যেতে চাইলে তার স্বামী ফারুক ভূঁইয়া যেতে নিষেধে করেন। তিনি একাই রাধিয়াকে ডাক্তার দেখানোর জন্য নিয়ে যান। বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার সময় রাধিয়ার বাবা রিনা খাতুনের ভাই শফিককে মোবাইলফোনে জানান রাধিয়াকে এক মহিলার কোলে রেখে প্রস্রাব করতে গেলে সেই মহিলা তাকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। এই খবর শুনে তিনি তার মা ও ভাইকে নিয়ে হাসপাতালে যান। হাসপাতালে তাদের সন্ধান না পেয়ে রাধিয়ার বাবার মোবাইলফোনে কল করলে তা বন্ধ পান। পরে কটিয়াদি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাদিয়াকে উদ্ধার, বাবা ফারুক ভুঁইয়া ও শিশুটির ক্রেতা জাকিয়া আক্তারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার জাকিয়া আক্তার দাবি করেন, নিঃসন্তান বোনের জন্য ৭০ হাজার টাকায় তিনি রাধিয়াকে কিনেছেন।
জুয়া খেলার টাকা’র জন্য নবজাতক কন্যা সন্তানকে বিক্রি করলো বাবা
0
Share.