ঢাকা অফিস: কনকনে শীত আর নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে তাবলীগ জামাতের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে মাওলানা জোবায়ের অনুসারী আলেম ওলেমা কওমীপন্থী তাবলীগ লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। রবিবার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম ধাপের ইজতেমা। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীতে মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দান পূর্ণ হওয়ায় মুসল্লিরা ময়দান পার্শ্ববর্তী কামারপাড়া রোড, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফুটপাত এবং আশপাশের খালি জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি নানা বিড়ম্বনাকে উপেক্ষা করে শুক্রবারেও টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে ছুটে আসেন। এদিন জুমা’ বার হওয়ায় সকাল থেকেই টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার লাখো মুসল্লীর ঢল নামে টঙ্গীর তুরাগ তীরে। নামাজের আগেই ইজতেমার পুরো প্যান্ডেল ও ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। প্যান্ডেলের নিচে জায়গা না পেয়ে মুসল্লি¬রা অবস্থান নেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশেপাশের সড়ক, গলি ও ফুটপাথগুলোর ওপরে। আখেরি মোনাজাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মুসল্লিদের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার প্রথম দিনে বাদ ফজর থেকে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার বাদ আছর থেকে জোবায়ের অনুসারীদের বিশ^ইজতেমার বয়ান শুরু হয়েছে। শনিবার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের তিনদিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লি¬র উদ্দেশ্যে যথারীতি তাবলীগের ৬ উসূল অর্থাৎ কালেমা, নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলিমিন, সহীহ নিয়ত ও তাবলীগ ইত্যাদি বিষয়ে আমবয়ানের মাধ্যমে ইজতেমার প্রথম পর্বের তিনদিনের কার্যক্রম শুরু হয়। ইজতেমা ময়দানের মুরব্বী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বাদ ফজর থেকে শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খুরশীদের আম বয়ান করছেন। এসময় বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোঃ আব্দুল মতিন। আজ জুমার নামাজ পড়াবেন বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ জোবায়ের। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও ইজতেমায় আগত বিভিন্ন দেশের-ভাষা মুসল্লিদের জন্য স্ব স্ব ভাষায় তাৎক্ষণিক বয়ান তরজমা করা হয়। বিশ্ব ইজতেমায় রয়েছে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। পুরো ইজতেমা ময়দান সিসি ক্যামেরা, ওয়াচটাওয়ারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদ্যরা পর্যবেক্ষণ করছেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বাজায় রাখার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ৫টি স্তরে বিভক্ত করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দান ও আশেপাশের এলাকার নিরাপত্তায় ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৯ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার, ফুটপেট্রোল, মোবাইল পেট্রোল চেকপোষ্টসহ পোশাকে সাদা পোশাকে পলিশ সদস্যরা ইজতেমা ময়দানের ভেতরে এবং বাহিরে দায়িত্ব পালন করছে। আরো দুই মুসল্লির মৃত্যুঃ বিশ্ব ইজতেমায় যোগদেয়া আরো দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- সিরাজগঞ্জের খোকা মিয়া (৬০) এবং চট্রগ্রামের মোহাম্মদ আলী (৭০)। শারিরীক অসুস্থ্যতার কারণে বৃহষ্পতিবার মধ্যরাতে তারা মারা গেছেন। এরআগে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকালে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া এলাকার ইয়াকুব শিকদার (৮৫) নামের এক মুসল্লি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। জানা গেছে, প্রতিবারের ন্যায় এবারও বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের শুরা সদস্য ও বুজর্গরা বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও তাৎক্ষনিকভাবে বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। বিদেশী মুসল্লিদের জন্য বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে নিবাস তৈরি করা হয়েছে। ইজতেমায় বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসুল্লীরা আলাদা আলাদা স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। এ দিকে ইজতেমা শুরুর দিন শুক্রবার হওয়ায় ইজতেমা মাঠে জুম্মার নামেজে অংশ নিতে ইজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও অনেক মুসল্লি আগেই ইজতেমাস্থলে এসেছেন। বাংলাদেশ সময় সকাল থেকে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশে-পাশের এলাকার বিপুল সংখ্যক ইজতেমাস্থলে জু’মার নামাজে অংশ নিতে আসছেন। ইজতেমা ময়দান এবং এর আশ পাশ এলাকায় যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু পাঞ্জাবি আর টুপি পড়া মানুষ আর মানুষ। ইজতেমার এ পর্বে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা জামাতবদ্ধ হয়ে দলে দলে কনকনে শীত, কুয়াশা আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, পিকআপ, ট্রেন, লঞ্চসহ ইত্যাদি যানবাহনে করে গত মঙ্গলবার থেকে ময়দানে এসেছেন। বৃহস্পতিবার ময়দান পূর্ণ হয়ে গেলে ময়দানে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা ময়দান পার্শ্ববর্তী সড়ককের ফুটপাত-কামারপাড়া সড়কে ও খালি জায়াগায় সামিয়ানা টানিয়ে আবস্থান নিয়েছেন। মুসল্লিদের আসা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আগত দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের পদচারণনায় শিল্প শহর টঙ্গী এখন যেন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। তিনদিন ব্যাপি বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামি ১২ জানুয়ারি রবিবার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। পরে চারদিন বিরতি দিয়ে ১৭ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা। ওই ইজতেমায় মাওলানা সা’দ অনুসারী মুসল্লিগণ অংশ নেবেন।
টঙ্গীতে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমা শুরু
0
Share.