ঢাকা অফিস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিধান অনুযায়ী কোনও শিক্ষককে ৯০ দিনের বেশি বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর নিয়ম নেই। তবে অর্থনীতি বিভাগের সহকারী শিক্ষক রুশাদ ফরিদীকে আড়াই বছর ধরে ছুটিতে রাখা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও ওই শিক্ষককে কাজে যোগদানের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র ফেডারেশন। বৃহস্পতিবার (২৮নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুরে ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে ওই কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে ছাত্র ফেডারেশনের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্যে একজন শিক্ষককের এ ধরনের শাস্তি হতে পারে না। অবিলম্বে ওই শিক্ষক যেন ক্লাসে ফিরতে পারেন, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ঘটনায় প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতার প্রকাশ পেয়েছে বলেও অভিযোগ করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সালমান ফারসি বলেন, ‘রুশাদ ফরিদী স্যারকে ক্লাসে ফিরে যেতে আদালত নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু বিভাগের নোংরা রাজনীতির কারণে তিনি এখন পর্যন্ত ক্লাসে ফিরতে পারছেন না। পৃথিবীর কোনও সভ্য দেশে এ ধরনের নজির আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। একজন শিক্ষককে তার মূল কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুর্বল। এমনকি অভিযোগগুলোর তদন্ত ছাড়াই তাকে বেআইনিভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই একজন শিক্ষকের যে মূল কাজ ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া, সেটি যেন তিনি করতে পারেন।’ ভুক্তভোগী শিক্ষক রুশাদ ফরিদী বলেন, ‘প্রশাসন অজুহাত দেখাচ্ছে যে, পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি না পাওয়া পর্যন্ত ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারবে না। আমার প্রশ্ন হলো পূর্ণাঙ্গ রায় না পেয়ে আপনারা যদি ব্যবস্থাগ্রহণ করেন তাহলে সেটি কোনো অপরাধ হবে কি? তখন হাইকোর্ট কি আপনাদের এর জন্য জিজ্ঞাসা করবে? আপনারা চাইলেই বিষয়টি এক ঘণ্টার মধ্যে করতে পারেন। এখন আপনারা যে অজুহাত দিচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে আপনারা বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চান না।’ মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি আবু রায়হান খান, উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্কসবাদী) ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মন তমা ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, বিভাগের শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ড. রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১৭ সালের ১২ জুলাই তাকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ছুটিতে পাঠানোর চিঠি দেয় সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পর তা পুনর্বিবেচনার দাবিতে উপাচার্য, উপ উপাচার্য (শিক্ষা), উপ উপাচার্য (প্রশাসন), রেজিস্ট্রার ও বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর উকিল নোটিশ পাঠান তিনি। তাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাড়া না দিলে, একই বছরের ১৩ জুলাই তিনি উচ্চ আদালতে রিট করেন। ২৪ জুলাই সিদ্ধান্তটি কেন অবৈধ নয়, তা জানাতে উচ্চ আদালত রুল জারি করেন। দীর্ঘ শুনানির পর চলতি বছরের ২৫ আগস্ট বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের হাইকোর্টের বেঞ্চ ড. রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের দেওয়া আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে। একইসঙ্গে তাকে কাজে যোগদানেরও নির্দেশ দেন। তবে আদালতের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি এখনও না আসায় সোমবার তিনি তার আইনজীবীর রায়ের সার্টিফিকেট ও যোগদানের কাগজপত্র বিভাগের অফিসে জমা দিতে গেলে অফিসের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা জানান চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া কোনও চিঠি রিসিভ করা যাবে না। তখন তিনি চেয়ারম্যান সঙ্গে দেখা করলে চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া চিঠি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। কর্তৃপক্ষ রায়ের বিষয়টিকে আইনি প্রক্রিয়া উল্লেখ করে, রায়ের কপি আসলে তারপর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানায়।