তিনটি নদীপথেই চলছে ভয়ংকর চাঁদাবাজি

0

বাংলাদেশ থেকে ছাতক(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধি: ছাতকে নৌপথের বিভিন্ন স্থানে পাথর, কয়লা ও বালুবাহী বলগেট (ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা) থেকে দীর্ঘদিন ধরে চলছে চাঁদাবাজি। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে বলগেটের চালকদের মারধর করা হয়। চাঁদাবাজির বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে এখানে। এখানের সুরমা, চেলা এবং পিয়াইন নদীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে প্রকাশ্যে বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে স্থানীয় সঙ্গবদ্ধ চক্র। চাঁদাবাজদের সাথে রাজনৈতিক দলের কিছু নেতার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এ উপজেলায় তিনটি নদীর দীর্র্ঘ নৌপথ নজরদারী করার জন্য ১ জন এসআই (ইনচার্জ), ১ জন নায়েক এবং ৬ জন কনস্টেবল রয়েছেন। মাত্র ৮ জন নৌপুলিশ দিয়ে চলে এখানের নৌপথ নজরদারী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নৌপুলিশ ফাঁড়ির নিজস্ব কোন নৌযান নেই। রয়েছে জনবল সংকট। ভাড়া চালিত নৌযান দিয়ে টহল পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, নদীতে চাঁদাবাজিতে যারা জড়িত তারা খুবই ভয়ঙ্কর। তাদের নিষ্ঠুরতা আর মারমুখী আচরণে মালবাহী এসব নৌযান চালকেরা আতঙ্কিত অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। একাধিক ভুক্তভোগী মাঝি, চালক ও নৌযানের মালিকেরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ভুক্তভোগীরা আরও জানান, চাঁদাবাজদের কথা মতো চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বেদম মারধর করা হয়। এমনকি প্রাণনাশের
হুমকিও দেয়া হয়। অনেক সময় টাকা দিয়েও তাদের জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে। জানা গেছে, একাধিকবার সংঘর্ষ, মামলা-গ্রেফতার, প্রশাসনের অভিযান সত্ত্বেও পণ্যবাহী নৌযান থেকে চাঁদা আদায় অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন সমিতির নামে চলছে এখানে চাঁদা আদায়। প্রশাসনের অভিযানে মাঝেমধ্যে স্পট থেকে দুই একজনকে আটক করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাহিরেই থেকে যাচ্ছেন মূলহোতারা। আটককৃতরা মূলত কমিশনে অথবা বেতনভুক্ত হিসাবে চাঁদা আদায় করেন। পর্দার আড়ালের রাঘব-বোয়ালরা আবার এদের জামিন করানোর জন্য শুরু করেন তদবির। এর মধ্যেই কমিশন দেওয়ার শর্তে নদীতে নতুন চাঁদাবাজ নিয়োগ করেন তারা। ফলে কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছেনা এসব চাঁদাবাজি। ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জের সুরমা, চেলা এবং পিয়াইন নদী পথে বালু, পাথর, চুনাপাথর ও কয়লা
পরিবহনের জন্য বাল্কহেড, বার্জ, কার্গো ও ইঞ্জিনচালিত নৌকাসহ শতাধিক বিভিন্ন ধরনের নৌযান আসে। বর্ষা মৌসুমে এ ধরনের যান চলাচল আরও বেড়ে যায়। এসব নৌযান ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছনাকান্দি ও লোভাছড়া পাথর কোয়ারিসহ বিভিন্ন কোয়ারি থেকে পাথর সংগ্রহ করে। এসব স্থানের ব্যবসায়ীদের নৌযানকে ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী নৌপথের ইছাকলস, কালারুকা ইউনিয়নের বোবরাপুর, দিগলবন্দ, চেলা নদীর মুখ, থানাঘাট, চাঁদনীঘাট, পেপারমিল ঘাট, নোয়ারাইঘাট, বারকাপন মুক্তিরগাঁও, বউলার মুখ, জামুরাসহ কয়েকটি পয়েন্টে চাঁদা দিতে হয় নৌযানগুলোকে। অভিযোগ উঠেছে যাদের চাঁদা আদায়ের বৈধতা রয়েছে তারাও অতিরিক্ত চাঁদা আদায় করছেন টোল আদায়ের নামে। প্রতিদিন নৌযানগুলো থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করছে
চাঁদাবাজরা। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একাধিকবার চাঁদাবাজদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত বছর ১৪ মে রাতে ছাতক শহরের নদীতে চাঁদাবাজি নিয়ে ফেসবুকের স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে গুলি লেগে মারা যান সাহাবুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। গুলিবিদ্ব হয়ে গুরুতর আহত হন ছাতক থানার ওসি মোস্তফা কামাল। এরপর পুলিশ তৎপর হলে কিছুদিন বন্ধ থাকে নৌপথে চাঁদাবাজি। পুলিশি তৎপরতা কিছুটা শীতিল হয়ে পড়লে আবারও শুরু হয় চাঁদাবাজি। সম্প্রতি নৌযান থেকে চাঁদা আদায়কালে অভিযান চালিয়ে কালারুকা ইউনিয়নের দিঘলবন্দ এলাকা থেকে একটি ইঞ্জিন
নৌকাসহ চারজনকে আটক করে নৌ-পুলিশ। এরপর ছাতক নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৩জনের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় মামলা করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সাইফুল ইসলাম বলেন, এখানে রয়েছে তিনটি নদী পথ। রয়েছে জনবল সংকট। তারপরও চাঁদাবাজদের ধরতে নিয়মিত টহল ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ গোলাম কবির জানান, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসন জিরো টলারেন্সে রয়েছে। সরাসরি জড়িত এবং পর্দার আড়ালের সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে

Share.