ঢাকা অফিস : রাজধানীর পল্লবী থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে বাড়ি ছাড়া তিন কলেজছাত্রী কক্সবাজার হয়ে নৌপথে জাপানে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন! বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে চরমভাবে আসক্ত এই তিন বান্ধবী লেখাপড়া ও পরিবারের অনুশাসনে ছিলেন বিরক্ত। তাঁরা মোবাইল ফোনে জাপানের বিভিন্ন ভিডিও দেখে সেখানে যাওয়ার কথা ভাবেন। তবে তাঁরা স্বেচ্ছায়ই কক্সবাজার গিয়ে অবস্থান করেছেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে পল্লবীর তিন শিক্ষার্থী কলেজ ড্রেস পরে এবং ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন। স্বজনরা জানায়, ওই তিন ছাত্রী বের হওয়ার সময় টাকা, সোনার গয়না এবং নিজেদের সার্টিফিকেট নিয়ে গেছেন। প্রথমে পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এরপর মামলা করে স্বজনরা। তিন তরুণীর বন্ধু-বান্ধবীসহ তরিকুল্লাহ (১৯), রকিবুল্লাহ (২০), জিনিয়া ওরফে টিকটক জিনিয়া রোজ (১৮) ও শরফুদ্দিন আহম্মেদ অয়নকে (১৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা বর্তমানে জেলহাজতে আছেন। গতকাল র্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘তারা (ছাত্রী) নিজেরাই বাসা থেকে পরিকল্পনা করে বের হয়। হাফসা নামের এক নারীর কথা বলছে। সে জাপান যাওয়ার অবাস্তব পথ দেখায়। জাপানে উচ্চশিক্ষার প্রলোভন দেখায়। মেয়েরা প্রতারণার শিকার হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা ছায়া তদন্ত করে কক্সবাজার চলে যাই। শেষে তারা আবার ফিরে আসে। এর সঙ্গে আর কোনো বিষয় আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘তারা তিনজনই সুস্থ আছে। আইনগত প্রক্রিয়ায় তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’ র্যাব কর্মকর্তারা জানান, তিন ছাত্রী বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন অপসংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে পড়েন। দিন দিন লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। পরিবার তাঁদের পড়াশোনার জন্য ও ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে চলার জন্য চাপ দিত। এতে তাঁরা উল্টো পরিবারের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়েন। তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেন, তাঁরা উচ্চাভিলাষী জীবনযাপন পছন্দ করতেন। দীর্ঘদিন বাসায় আবদ্ধ থাকার সময় তাঁরা ভিডিও দেখে জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। বেশি বেশি জাপানি সিনেমা-ধারাবাহিক, টিকটক ভিডিও, সাংস্কৃতিক প্রগ্রাম দেখে দেখে জাপানি ভাষা কিছুটা আয়ত্ত করেন। তাঁরা দেশ ছেড়ে স্বাধীন জীবনযাপন ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। দুই মাস আগে তিন বান্ধবী তাঁদের বন্ধু তরিকুলের সঙ্গে দিয়াবাড়ী এলাকায় ঘুরতে গেলে হাফসা চৌধুরী নামের এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর ফেসবুকে যোগাযোগে হাফসা তাঁদের জাপানে যেতে সহায়তা করবেন বলে জানান। তিনিই তিনজনকে কক্সবাজার হয়ে নৌপথে জাপান যাওয়ার নির্দেশনা দেন। কথামতো তিনজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে রিকশায় গাবতলী যান। সেখানে তাঁরা নিজেদের ই-মেইল, ফেসবুক আইডি এবং ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ধ্বংস করেন। পরে তাঁরা নৌকাযোগে নদী পার হয়ে আমিনবাজার এলাকায় পৌঁছলে হাফসার দুই সহযোগী একটি কালো রঙের নোয়াহ মাইক্রোবাসে করে তাঁদের অজ্ঞাত জায়গায় নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে তিনজন সিএনজিচালিত আটোরিকশায় কমলাপুর রেলস্টেশনে গেলেও চট্টগ্রামগামী কোনো ট্রেন পাননি। সেখান থেকে তিনজন বাসে কুমিল্লার ময়নামতী পৌঁছেন। তাঁরা নিজেদের চুল কেটে ফেলে পশ্চিমা বেশভূষা ধারণ করেন। ময়নামতী ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে তাঁরা কেডস, পোশাক ও একটি মোবাইল ফোন কেনেন। সেখান থেকে আবার বাসে চেপে চট্টগ্রাম সিনেমা প্লেস বাসস্ট্যান্ডে যান। সেখানে আরো দুটি মোবাইল ফোন কিনে আরেকটি বাসে করে কক্সবাজার যান। তাঁরা ১ থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজার কলাতলীতে একটি হোটেলে অবস্থান করে সিমের পরিবর্তে ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করেন। ২ অক্টোবর তাঁরা কক্সবাজার সৈকত এলাকায় বেড়াতে গেলে হাফসার লোক পরিচয়ে আসিফ ও শফিক নামের দুই যুবক তাঁদের কাছে আসেন। যুবকরা তাঁদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার ও কিছু টাকা নিয়ে সটকে পড়েন। এ ঘটনায় তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে হোটেলে অবস্থান নেন। এ সময় হোটেলের আশপাশে র্র্যাবের উপস্থিতি টের পান তাঁরা। র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, হাফসা নামের কোনো নারীর ফেসবুক, ই-মেইল আইডি তিন ছাত্রী শনাক্ত করতে পারেননি। এ ছাড়া নোয়াহ গাড়িতে থাকা দুই যুবক এবং কক্সবাজারে স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়া দুই যুবককেও শনাক্ত করা যায়নি। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
তিন কলেজছাত্রী কক্সবাজার হয়ে নৌপথে জাপানে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল
0
Share.