ঢাকা: ‘আমরা এখন মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরের বাসিন্দারে মামা’। ঝলমলে আলোক সন্ধ্যায় ঝালমুড়ি খেতে খেতে কথাগুলো বলছিল কয়েকজন যুবক। গৃহবধূ ফাতেমা খাতুন ও রজব আলী দম্পত্তি তো আনন্দে আত্মহারা। বললেন, ‘কেউ বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে আর বিলসিমলা বলব না। বলবো আমাদের বাড়ি লাইটিং রাস্তার ধারে।’এসব অভিব্যক্তি রাজশাহী নগরীর বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত রাস্তার পাশের বাসিন্দাদের। ওই এলাকার বাসিন্দা শুনলে নগরীর প্রাণকেন্দ্র এলাকার যেসব মানুষ এত দিন ভাব দেখিয়ে বলত ‘আপনারা তো গ্রামের মানুষ’, তাদের চোখ তো ছানাবড়া। বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করার পর সংযোজন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সড়কবাতি।গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নান্দনিক এই আলোকায়নের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। উন্নত বিশ্বের নামিদামি শহরগুলোর মতো দেশের প্রথম সিটি হিসেবে রাজশাহী নগরীর মহাসড়কে এ ধরনের দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতি সংযোজিত হলো। এই সড়কবাতির আলোতে ঝলমল করছে চার দশমিক দুই কিলোমিটার সড়ক ও আশপাশের এলাকা।সড়কবাতির উদ্বোধন করে মেয়র লিটন বলেন, ‘বাইরের দেশ থেকে আমদানি করে সুদৃশ্য পোল ও লাইটিং রাজশাহীতে নতুন এক মাত্রা পেল। এ রকম সুদৃশ্য পোল ও বাতি বাংলাদেশের আর কোনো শহরে নেই। এই সড়কবাতি শুধু আলো আর নিরাপত্তা বাড়াবে তা নয়, সঙ্গে সৌন্দর্যও বাড়াচ্ছে।’মেয়র লিটন আরও বলেন, ‘উপশহর থেকে মালোপাড়া পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ শেষ পর্যায়ে। আলিফ লাম মিম ভাটা থেকে বিহাস পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া আলুপট্টি থেকে তালাইমারি পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। এই সড়কগুলোতেও দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতি লাগানো হবে। পদ্মাপাড়ে দৃষ্টিনন্দন দুটি ওভারব্রিজ করা হয়েছে। ব্রিজ দুটিতে গ্রাফিটি করা হচ্ছে। নানা রঙে আলপনায় রঙিন করা হচ্ছে শহরটি। এভাবেই রাজশাহীকে অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’মহানগরীর পশ্চিমের প্রবেশ দ্বার কাশিয়াডাঙ্গা মোড় থেকে বিলসিমলা রেলক্রসিং পর্যন্ত চার দশমিক দুই কিলোমিটার সড়কটিতে ১৭৪টি দৃষ্টিনন্দন বৈদ্যুতিক পোল বসানো হয়েছে। প্রতিটি পোলে রয়েছে দুটি করে এলইডি বাল্ব। ১৭৪টি বৈদ্যুতিক পোলে ৩৪৮টি আধুনিক দৃষ্টিনন্দন এলইডি বাল্ব। যা প্রজাপতির মতো ডানা মেলে রয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এ বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতিগুলো অটোলজিক কন্ট্রোলারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন-অফ হবে। আধুনিক দৃষ্টিনন্দন এ সড়কবাতিগুলো স্থাপনের ফলে নাগরিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটবে। রাত্রিকালীন গাড়ি চলাচলে গতির সঞ্চার হবে। আধুনিক বসবাসযোগ্য সুন্দর পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরীকে আরো আধুনিক সাজে সজ্জিত করতে এটি একটি নতুন মাত্রা যোগ হলো। এ ছাড়া সড়কের দুই পাশে ১০ ফুট চওড়া ফুটপাত ও রাস্তার দক্ষিণ পাশে আট ফুট বাইসাইকেল লেন নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কটির উভয়পাশে আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আইল্যান্ড। সবুজায়নের জন্য আইল্যান্ডে এরই মধ্যে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে।প্রজাপতির ডানায় উদ্ভাসিত আলোর দ্যুতি দেখতে বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত রাস্তায় ভিড় করছে নগরীর বিভিন্ন এলাকার নানা বয়সী মানুষ। কেউ দল বেঁধে ছবি তুলছে। কেউ ব্যস্ত সেলফি তুলতে। প্রথমদিনই এসেছিলেন নগরীর তালাইমারী এলাকার বয়োবৃদ্ধ কমেলা বেগম ও হাফেজ উদ্দিন। অভিভূত এই দম্পত্তি বললেন, ‘খুব ভালো লাগছে বাবা, সারা জীবন এমন দৃশ্য টিভি সিনেমায় বিদেশি ছবিতে দেখেছি। আজ নিজের শহরে স্বচক্ষে দেখলাম। কী যে ভালো লাগছে, বলে বোঝানো যাবে না।’তরুণ উদ্যোক্তা আরাফাত রুবেল বলেন, ‘করোনার বৈশ্বিক দুরাবস্থার মধ্যে রাজশাহীর মানুষ চিত্ত বিনোদন কথা ভুলেই গিয়েছিল। এখন রাজশাহীর মানুষ এমন আলোক ঝলমল নতুন রাস্তা পেয়ে উচ্ছ্বসিত। সন্ধ্যার পরই রাস্তাটি হয়ে উঠছে পারিবারিক চিত্ত বিনোদনের কেন্দ্র। তিনি বলেন, ‘মেয়র লিটনের দূরদর্শিতা, শৈল্পিক মনোভাব আর সুনিপুণ চিন্তা-চেতনা তাঁর কাজের প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজশাহীবাসী এমন একজন নগরপিতার স্বপ্ন দেখে। আমরা একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরীর স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে রাজশাহী।’
দৃষ্টিনন্দন আলোর নগরী এখন রাজশাহী
0
Share.