ঢাকা অফিস: দেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৯৮ শতাংশের শরীরেই ডেলটা ভ্যারিয়্যান্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কোভিড-১৯-এর জিনোম সিকোয়েন্সিং নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষণা ফলাফলে এ তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে যাদের ক্যানসার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ এবং ডায়াবেটিস আছে, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।গবেষণায় আরও বলা হয়, ডেলটা ভ্যারিয়্যান্ট দ্রুত সংক্রমণশীল এবং শিশুরাও এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া ডেলটা ভ্যারিয়্যান্টে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার যেহেতু অনেক বেশি, তাই দেশের সব মানুষকে পুরোপুরি টিকার আওতায় না আনা পর্যন্ত আরও বেশি সচেতন হওয়ারও তাগিদ দেন গবেষকেরা।বিএসএমএমইউ’র শহীদ ডা. মিল্টন হলে আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ করোনার জিনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার ফলাফল প্রকাশের সময় এ তথ্য জানান।চলতি বছরের ২৯ জুন থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত সারা দেশব্যাপী রোগীদের ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। জিনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রজেক্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক (সুপারভাইজার) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন উপাচার্য নিজেই। অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানুর নেতৃত্বে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য বলেন, গবেষণায় দেশের সব বিভাগের রিপ্রেজেন্টেটিভ স্যাম্পলিং করা হয়। গবেষণায় মোট ৩০০ কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর ন্যাজোফ্যারিনজিয়াল সোয়াব স্যাম্পল থেকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়।গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ পুরুষ। তবে, বিএসএমএমইউ’র গবেষণায় ৯ মাস থেকে শুরু করে ৯০ বছরের বয়স পর্যন্ত রোগী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩০-৩৯ বছর বয়সের রোগীদের সংখ্যা বেশি। যেহেতু কোনো বয়স সীমাই কোভিড-১৯-এর থেকে ইমিউন করছে না, সে হিসাবে শিশুদের মধ্যেও যে কোভিড সংক্রমণ ঝুঁকি নেই, তা বলা যাচ্ছে না।গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের কো-মরবিডিটি রয়েছে—যেমন ক্যানসার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ বা ডায়াবেটিস—তাদের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। পাশাপাশি ষাটোর্ধ্ব বয়সের রোগীদের দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হলে সে ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি বেশি দেখা গেছে। যদিও এ গবেষণায় টিকার কার্যকারিতার বিষয়টি চলমান রয়েছে।করোনার জেনোম সিকোয়েন্সিং বিশ্লেষণ গবেষণায় প্রকাশিত তথ্য থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে গত ডিসেম্বরে ইউকে বা আলফা ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমণ হার বেশি ছিল। পরে মার্চের রিপোর্ট অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকার বা বেটা ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমণ হার বেশি ছিল।এদিকে, গত এক মাসের ৩০০ স্যাম্পলের জেনোম সিকোয়েন্সিংয়ে দেখা যায়—মোট সংক্রমণের প্রায় ৯৮ শতাংশ হচ্ছে ডেলটা ভ্যারিয়্যান্ট। এক শতাংশ হচ্ছে বেটা ভ্যারিয়্যান্ট দ্বারা সংক্রমণ। যদিও গবেষণার প্রথম ১৫ দিনে এই সংখ্যা ছিল ৩ শতাংশ। একজন রোগীর ক্ষেত্রে মরিশাস ভ্যারিয়্যান্ট অথবা নাইজেরীয় ভ্যারিয়্যান্ট (তদন্তাধীন ভ্যারিয়্যান্ট) পাওয়া গেছে।শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনা অনেক ক্ষেত্রে বহমান জীবন-যাপনে বাধা তৈরি করলেও, জীবন থেমে নেই। অন্যান্য জেনেটিক্স রোগগুলোর ওপর গবেষণা কার্যক্রম অবিলম্বে শুরু করা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের নিজস্ব ডাটা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।গবেষণার উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনার জেনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার উদ্দেশ্য—ভাইরাসটির জিনোমের চরিত্র উন্মোচন, মিউটেশনের ধরন এবং বৈশ্বিক ভাইরাসের জিনোমের সঙ্গে এর সম্পর্ক বের করা এবং বাংলাদেশি কোভিড-১৯ জেনোম ডাটাবেস তৈরি করা।
নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৯৮ শতাংশের শরীরেই ডেলটা ভ্যারিয়্যান্টের উপস্থিতি
0
Share.