ঢাকা অফিস: টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত হলুদের সমারোহ। গ্রামের ক্ষেতজুড়ে আবাদ হয়েছে সরিষা। আর এই সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষ করে কৃষক এবং মৌ চাষী উভয়ই লাভবান হচ্ছে। কারণ সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষ করলে সেই এলাকার জমির ফলনও বৃদ্ধি পায়। ইতিমধ্যে নাগরপুর উপজেলার বিভিন্ন জমির সরিষা থেকে মৌমাছির সাহায্যে মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে। নাগরপুরের গয়হাটা, ধুবড়িয়া, ভাদ্রা, মোকনা, দপ্তিয়র, মামুদনগর, বেকড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় মৌচাষী দিয়ে সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ চাষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশির ভাগ মৌ চাষী এসেছেন সাতক্ষীরা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কথা হয় সাতক্ষীরার মৌচাষী আব্দুর রহমানের সাথে। সে উপজেলার মোকনা ইউনিয়নের বেটুয়াজানীতে তার মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করেছেন। এ সকল মৌচাষীদের নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। স্থানীয় কৃষক রফিক মিয়া আক্ষেপের সূরে বলেন, আমাদের যদি কৃষি অফিস মৌ চাষের প্রশিক্ষন দিতো। তাহলে আমরা সরিষার সাথে মৌ চাষ করে অধিক লাভবান হতে পারতাম। কৃষক, মৌচাষী ও উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাগরপুর উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সরিষা ক্ষেতে মধু চাষের ওপর কৃষকদের প্রশিক্ষণ না দিলেও কৃষকদের মৌ চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। তাছাড়া সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষ করলে ফসলের কোন প্রকার ক্ষতি হয় না। বরং উল্টো সরিষার ফলন ২০ ভাগ বৃদ্ধি পায় সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারনা দেয়া হয়েছে কৃষকদের উপজেলা কৃষি অফিস থেকে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এই উপজেলার কৃষকেরা এবার ব্যাপক সরিষার আবাদ করেছেন। সরিষা ক্ষেতে মধুর জন্য মৌ বাক্স বসানো হয়েছে। সরিষার পরাগায়ন ঘটিয়ে মধু সংগ্রহ করে থাকে মৌমাছি। ফলে সরিষার ফলন ভালো হয় ও বাড়তি মধু পাওয়া যায়। প্রতিটি বাক্সে মাত্র একটি রাণী মৌমাছি থাকে। এবার উপজেলায় ৯ হাজার ৮১৮ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষার ক্ষেতে মৌমাছি ফুলের ওপর বসলে ফুলের পরাগায়নে ফসলের পুষ্টি বৃদ্ধি হয়। সরিষার ফলন ২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। মৌ চাষের কারণে এবার সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় অন্য বছরের তুলনায় বেশি আয় হবে বলে জানান স্থানীয় কৃষকেরা। জানা যায়, আগে এ উপজেলার কৃষকেরা ফলন নষ্ট হবে ভেবে তাঁদের আবাদি জমিতে মৌ বাক্স বসাতে দেননি। অথচ মৌ চাষের ফলে সরিষার ২০ ভাগ ফলন বাড়ে। শুধু সরিষাই নয়, মৌমাছিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে নানা ধরনের রবিশস্যের ফলন বৃদ্ধি করে। পরে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে আবাদি জমির পাশে মৌমাছির বাক্স স্থাপন করতে সহযোগিতা করছেন সাধারণ কৃষক। বর্তমানে মৌ চাষে প্রতি বাক্স থেকে সপ্তাহে ৪-৫ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে মধু সংগ্রহ বেশি হয়। ৩০টি বাক্সে ১২০ থেকে ১৫০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। মৌ চাষে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। মৌ চাষের কারণে একদিকে যেমন সরিষা উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে অল্প খরচে মৌ চাষ করে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। বাণিজ্যিক মৌ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন নাগরপুর উপজেলার আরও অনেকে। নাগরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইমরান হোসেন শাকিল বলেন, এই উপজেলায় স্থানীয়ভাবে কোনো মৌ চাষ নেই। যারা মৌ চাষ করছেন তারা সকলেই দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা চাষী। তাই এখানে মৌ চাষ উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। কৃষকদের ফসলের সাথে মৌ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে জার্মানী থেকে আমদানীকৃত মৌ বাক্স কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। দেশের নানা এলাকার মৌচাষিদের সাফল্যের কথা শুনে ও মৌ চাষ দেখে এখানকার অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
নাগরপুরে সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষ করে লাভবান চাষীরা
0
Share.