ডেস্ক রিপোর্ট: নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় এবং ধর্ম ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে শিশুসহ ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নানাভাবে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ১৯৫০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা। এদের বেশিরভাগের বয়স পাঁচ থেকে ১৭ বছর। বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) দেশটির রয়্যাল কমিশনের এক প্রতিবেদনে এমন ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এসেছে। গত কয়েক দশকে নিউজিল্যান্ডের বিশ্বাস-ভিত্তিক এবং রাষ্ট্রীয় কেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলিতে বহু শিশু, তরুণ এবং দুর্বল প্রাপ্তবয়স্কদের উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের রয়্যাল কমিশনের ওই প্রতিবেদনে থেকে জানা গেছে, কেয়ার সেন্টারে থাকাকালীন নির্যাতনের শিকার হন ৪০ শতাংশ মানুষ। একে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের বেদনাদায়ক ঘটনা বলছেন দেশটির গণপরিবহন মন্ত্রী ক্রিম হপকিনস। বলেন, ‘রাজ্যের তত্ত্বাবধানে থাকা সকল শিশুদের নিরাপদে থাকার কথা ছিল। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে বিপরীত হয়েছে।’ নির্যাতনের মুখে পড়া বেশির ভাগেরই বয়স পাঁচ থেকে সতের। কিন্তু কয়েকজনের বয়স ২০। তবে নির্যাতনের মাত্রা বেশি হয় পাঁচ থেকে ১০ বছর বয়সীদের উপর। রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলোতে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন করা হয়। কিছু মনোরোগ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পুরুষ রোগীদের দিয়ে নারী রোগীদের জোর করে ধর্ষণ করাতো বলে জানা গেছে প্রতিবেদনে।সরকারি সেবা কেন্দ্রগুলিতে নারীদের যৌনাঙ্গে এবং পায়ে বৈদ্যুতিক শক এবং যোনি মুখে অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহারেরও খবর মিলেছে। অপ্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতেই সেবা দেয়া হতো কেয়ার সেন্টারগুলিতে।নির্যাতনের শিকার হওয়া আন্নি জানান, ‘১৯৭৯ সালে আমার বয়স ১৭ ছিল। তখন আমি এক সরকারি মনোরোগ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ছিলাম। সেখানে আমি কোন কোন দিন দিনে দুইবার শক নিয়েছিলাম।’এই তদন্ত দলকে তিনি আরো, বহু রাত তারা যখন আমাকে শক দেয়, একপর্যায়ে আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।’
অন্ধকার অধ্যায়: এটিকে অন্ধকার অধ্যায় অ্যাখা দিয়ে ২০১৮ সালে রয়্যাল কমিশনে এক ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন বলেন, এই সহিংসতা অবশ্যই মোকাবিলা করা দরকার ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বাসভিত্তিক বা ধর্মীয় গৃহে শিশু এবং যুবক-যুবতীদের নির্যাতনের আশঙ্কা থাকে ২১ থেকে ৪২ শতাংশ পর্যন্ত। দীর্ঘদিনের গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক সমস্যা সমাধান করা দরকার ছিল বলে রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়। এ ধরনের নির্যাতন এখনও অব্যাহত রয়েছে বলছে রয়্যাল কমিশন। মূলত সরকারি কেয়ার সেন্টারগুলি থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তিরা শারীরিক এবং অমানবিক যৌন নির্যাতনের সাহসী বর্ণনা দেন। বেঁচে যাওয়া একজন জানান, নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে আত্মহত্যারও চেষ্টা চালান তিনি। বলেন, ‘আমার বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছে ছিল না।’ ধর্মীয় এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিভাবে শারীরিক, যৌন নির্যাতন এবং অপব্যবহার রোধ করা যায় তা এই প্রতিবেদন থেকে শিক্ষা লাভ করবে বলে জানায় নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় একটি গির্জা। সহিংসতার শিকারের হারে সবচেয়ে বেশি সম্ভবত আদিবাসী মাওরি শিশুরা। প্রতিষ্ঠানগুলোতে যত্নে থাকা নির্যাতনের শিকার শিশুদের মধ্যে ৮১ শতাংশ মাওরি। কিছু বিশ্বাসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান যত্ন নেয়ার কথা বলে, মাওরি শিশুদের যৌন ও শারীরিক নির্যাতন করত। গেল বছর নিউজিল্যান্ডজুড়ে কয়েক হাজার মাওরি সম্প্রদায়ের মানুষ এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন। ঝুঁকিপূর্ণ বাচ্চাদের পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে রাষ্ট্রীয় যত্নে রাখার বিষয়টি বন্ধের দাবি তোলেন তারা।