ডেস্ক রিপোর্ট: সামরিক বাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বিক্ষোভকারীদের কফিন নিয়ে বলিভিয়ার রাজধানী লা পাজে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের হাজার হাজার সমর্থক। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট প্যালেস সংলগ্ন একটি চত্বরের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের উদ্দেশ্যে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বিক্ষোভকারীরা এদিন প্রেসিডেন্ট প্যালেস সংলগ্ন চত্বরে একটি সাঁজোয়া যানের ওপর নিহত একজনের কফিন ও অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট জিনাইনা আনিয়েজের প্রতিকৃতিও স্থাপন করেছিল। খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ দক্ষিণ আমেরিকার এ দেশটি টানা ১৪ বছর শাসন করেছিলেন বামপন্থি মোরালেস। আদিবাসী এ প্রেসিডেন্ট চলতি মাসের প্রথমদিকে ক্ষমতাচ্যুত হলে বিরোধীদলীয় সিনেটর আনিয়েজ নিজেকে ‘অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট’ ঘোষণা করেন। এরপর থেকে মোরালেস সমর্থকদের বিক্ষোভে কার্যত দেশটি অচল হয়ে পড়েছে। রাজধানী লা পাজ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি শহরে আন্দোলনকারীদের থামাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। মেক্সিকোতে আশ্রয় নেওয়া মোরালেস বলছেন, সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে বর্ণবাদী ডানপন্থিরা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। যে কোনো মূলে দেশে ফিরবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার টুইটারে লেখা এক পোস্টে সাবেক এ প্রেসিডেন্ট অক্টোবরের নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হয়েছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে আন্তর্জাতিক ‘ট্রুথ কমিশন’ গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছেন। অক্টোবরের এ নির্বাচনের ফল নিয়েই প্রথম মাঠে নামে বিরোধিরা। মোরালেসকে ১০ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করতে প্রশাসন কারচুপি করেছিল বলেও অভিযোগ ছিল তাদের। পরে তাদের বিক্ষোভে বলিভিয়া পুলিশের সদস্যরা যোগ দেয়; সেনাবাহিনী মোরালেসকে সরে দাঁড়াতে বললে বামপন্থি এ প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেন। একে একে সরে দাঁড়ান ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সিনেট প্রেসিডেন্টও। মোরালেসের পদত্যাগপত্র বলিভিয়ার পার্লামেন্টে গৃহীত হওয়ার আগেই আনিয়েজ নিজেকে ‘অন্তবর্তী প্রেসিডেন্ট’ ঘোষণা করেন; যার সাংবিধানিক কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সমর্থন নিয়ে আনিয়েজ এখনো বহাল তবিয়তে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকলেও টানা বিক্ষোভ তাকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। মোরালেসের দল মুভমেন্ট ফর সোশালিজমের (এমএএস) অনেক আইনপ্রণেতা অবশ্য অক্টোবরের ২০ তারিখের ভোট বাতিল করে নতুন নির্বাচনের পথ করতে বিরোধীদল ও অন্তর্বতী সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছেন। মোরালেসের জন্য রাজপথে নামা বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। “আমাদের দেশকে স্থিতিশীল করতে হবে। আমি জনগণকে, মুভমেন্ট ফর সোশালিজমের অনুসারীদের বিক্ষোভ থামাতে এবং আমাদের রাজনৈতিক দলের নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে অনুরোধ করছি,” রয়টার্সকে বলেছেন হাউস অব ডেপুটিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি কাব্রেরা। নতুন নির্বাচন হলে এমএএস তাতে মোরালেস কিংবা সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট গার্সিয়া লিনেরাকে প্রার্থী করা হবে না বলেও আশ্বস্ত করেছেন এমএএসের অন্যতম এ নেতা। এমএএস আগামী বছরের ১২ জানুয়ারি নতুন নির্বাচনের প্রস্তাব দিচ্ছে বলে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া দেখে জানিয়েছে রয়টার্স। অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী রোক্সানা লিজারাগাও বলছেন, ২০ জানুয়ারির আগে নতুন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান এখনও সম্ভব।
নিহতদের কফিন নিয়ে বলিভিয়ায় মোরালেস সমর্থকদের বিক্ষোভ
0
Share.