নুরের বিরুদ্ধে ঢাবি ছাত্রীর আরেকটি মামলা, তদন্তে পিবিআই

0

ঢাকা অফিস: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রীকে ‘কটূক্তি’ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। আজ বুধবার বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে বাদী হয়ে মামলাটি করেন ঢাবির শিক্ষার্থী। শুনানি শেষে বিচারক জগলুল হোসেন মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নজরুল ইসলাম শামীম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘পাশাপাশি আদালত আগামী ২৯ নভেম্বর এ ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।’ গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রথমে ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে, পরের দিন ২১ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নুর ও তাঁর সহকর্মীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ওই ছাত্রী। আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তিনি গত ৮ অক্টোবর থেকে টিএসটির সামনে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন করছেন। অনশন চলাকালে গত সোমবার নুরের দুই সহকর্মী- বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সহসভাপতি নাজমুল হুদাকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার মামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশের এই তাঁবুতে বসেই অনশন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী।  তবে নুরসহ মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে অনশনে অনড় রয়েছেন মামলার বাদী। এ রকম একটি পরিপ্রেক্ষিতেই ডাকসুর সাবেক এই ভিপি গত সোমববার ফেসবুক লাইভে আসেন।

ওই ছাত্রীকে ‘দুশ্চরিত্র’ মন্তব্য করে নুর বলেন, ‘নাজমুল হাসান সোহাগের সঙ্গে যে একটা ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে আপনারা দেখেছেন, লঞ্চের কেবিনে হাসিখুশিভাবে। যে লঞ্চের কেবিনে মেয়েটি ধর্ষণের অভিযোগটি এনেছিল, সেই লঞ্চের কেবিনে। একেবারেই হাস্যরসাত্মক, ছিঃ! আমরা ধিক্কার জানাই যে, এত নাটক করছে, যেই দুশ্চরিত্র। যে ধর্ষণের নাটক করছে। স্বেচ্ছায় একজন ছেলের সঙ্গে বিছানায় গিয়ে, লঞ্চে হাসিখুশিভাবে।’ লাইভে ডাকসুর সাবেক ভিপি দুটি মামলার অভিযোগ খণ্ডন, মামলার বাদী ও তাঁর অনশন নিয়েও কথা বলেন। এক ঘণ্টা ২২ মিনিটের লাইভে নুর ওই ছাত্রীকে ‘দুশ্চরিত্র’ বলে মন্তব্য করায় এ নিয়ে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আজ ঢাবি ছাত্রী নুরের বিরুদ্ধে মামলা করেন ট্রাইব্যুনালে।

‘একটি মেয়ের জন্য খুবই অপমানজনক শব্দ’: মামলার বাদী এজাহারে বলেন, ‘অত্র মামলার বাদী সহজ-সরল, পর্দানশীল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি স্টাডিজের মেধাবী ছাত্রী। অপরদিকে আসামি (ভিপি নুর) প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের মনগড়া, আইন বহির্ভূত, সরকারি এবং রাষ্ট্রবিরোধী অসত্য, অর্থহীন এবং উসকানিমূলক বক্তব্য কোনো কারণ ছাড়াই নিজেকে ভাইরাল করার জন্য প্রায়ই প্রকাশ করে থাকেন।’বাদী আরো বলেন, আসামি তার ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিও প্রকাশ করে বাদিনীকে ‘দুশ্চরিত্রহীন’ বলে প্রকাশ করে। যা একটি মেয়ের জন্য খুবই অপমানজনক শব্দ। যেহেতু আসামি উল্লেখিত ভিডিওতে বলেন যে, ‘ছি!  আমরা ধিক্কার জানাই এত নাটক যে করছে সে দুশ্চরিত্রহীন, ধর্ষণের নাটক করেছে স্বেচ্ছায় একটি ছেলের সাথে বিছানায় গিয়ে।’‘যা বাদিনীর জন্য অপমানজনক, মানহানিকর এবং আক্রমণাক্তক মিথ্যা তথ্য বটে। যেহেতু আসামি ছাত্র অধিকার পরিষদ নামীয় একটি সংগঠনের নেতা, তার এহেন উসকানিমূলক বক্তব্যগুলো আক্রমণাক্তক, বিরক্ত, অপমান, অপদস্ত ও সমাজে হেয়-প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে প্রকাশ ও প্রকাশ করে সমাজে বাদিনী ও বাদিনীর পরিবারকে প্রতিবেশীদের সাথে বা সমাজের সাথে শত্রুতা ও ঘৃণা সৃষ্টি করে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় এবং বাদিনীর সুনাম নষ্ট করে ও মানহানি করে।’ এটা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(১)/ ক, ২৯(১), ৩১(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে এজাহারে উল্লেখ করেন ঢাবির ছাত্রী।

Share.