পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত কাতারে

0

ডেস্ক রিপোর্ট: দুনিয়ার দেশে দেশে প্রাণঘাতি করোনায় আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। শক্তিশালী অর্থনীতির পারস্য উপসাগরীয় রাষ্ট্র কাতারে ৫ শতাধিক বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত। দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাতারে এ পর্যন্ত ৩ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা বিষয়ক ফোকাল পয়েন্ট ডা, খলিলুর রহমান এবং দোহায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ জানিয়েছেন- গত ৭ ই এপ্রিল পর্যন্ত কাতারে ৫ শতাধিক বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত হওয়ার রিপোর্ট পেয়েছেন তারা। তখন দেশটিতে মোট আক্রান্তে সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৭ জন। এক সপ্তাহে অর্থাৎ ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত কাতারে দেশি-বিদেশি মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে  ৩ হাজার ৪ শ ২৮ জন। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫২ হাজার ৬ শ ২২ জনের করোনা টেস্ট করা হয়েছে বলে জানান দেশটির স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় কমিটির মূখপাত্র। করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত আপডেট জানাতে মঙ্গলবারের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ২৪ ঘন্টায় ৩৯ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। করোনা থেকে এ পর্যন্ত মুক্তি পেয়ে হাসপাতাল ছাড়তে পেরেছেন ৩ শ ৭৩ জন। গত এক সপ্তাহে  নতুন আক্রান্ত ১  হাজার ৩ শ ৭১ এবং এ পর্যন্ত  হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া ৩ শ ৭৩ জনের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি আছেন কি-না? জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, থাকতে পারেন, কিন্তু নতুন সুস্থ বা অসুস্থ কারও ন্যাশনানিলিটি প্রকাশ এখন আআর প্রকাশ করে না কতৃপক্ষ। রাষ্ট্রদূত বলেন, দোহার বাংলাদেশ কমিউনিটি থেকে তারা দেশটিতে ব্যাপক ভিত্তিক বাংলাদেশি আক্রান্তের খবর পাচ্ছিলেন। কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। গত সপ্তাহেই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে  ৫ শতাধিক বাংলাদেশি আক্রান্তে কথা জানায় দেশটির স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় কমিটি। তবে পরবর্তীতে আরও কিছু লোক আক্রান্তের খবর কমিউনিটি মারফত পেলেও দোহা আনুষ্ঠানিকভাবে না বলা পর্যন্ত তারা সেই সংখ্যার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেছেন না।
মারা যাওয়া দুই বাংলাদেশির তথ্য পেলেও তৃতীয়জনের বিস্তারিত পায়নি মিশন: এদিকে গত শনিবার দোহায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তৃতীয়  বাংলাদেশিরর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। তবে  মঙ্গলবার পর্যন্ত তার বিস্তারিত মিশন জানতে পারেনি বলে জানান তিনি। রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু কাতার কতৃপক্ষ তার বিস্তারিত এখনও শেয়ার করেনি। কাতারে করোনাভাইরাসে প্রথম বাংলাদেশির মৃত্যু হয় ২৩ শে মার্চ। ৫৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির নাম দীপক কুমার দেব। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে তার বাড়ি। কাতারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওই বাংলাদেশির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, তিনি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকে নানা রোগে ভুগছিলেন। ১৬ মার্চ তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে নেওয়া হয়েছিল। ২৩ শে মার্চ দুপুরের দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ওই বাংলাদেশি ৩৫ বছর ধরে কাতারে ছিলেন। বাংলাদেশে ছুটি কাটিয়ে গত ৬ই ডিসেম্বর তিনি কাতারে যান। তিনি চার সন্তানের জনক। ৩১ শে মার্চ কাতারে করোনায় দ্বিতীয় বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। ৫৮ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশির নাম আবুল কাসেম। তার দেশের বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে।
কাতারের করোনা পরিস্থিতির বিস্তারিত:  এদিকে কাতার প্রবাসী বাংলাদেশি এবং মিশন সূত্র জানিয়েছে- কাতার সরকার করোনা ঠেকাতে শুরু থেকেই তৎপর। সরকারী নির্দেশনা মতে, মিশনের সব ধরনের কনসুল্যার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে মিশন সক্রিয়ভাবে কমিউনিটি এবং লেবার ক্যাম্পে যোগাযোগ রাখছে প্রবাসীদের জরুরি সহায়তা দিতে। কাতার কতৃপক্ষ লকডাউন এলাকায় খাবার সাপ্লাই দিচ্ছে। ৩-৪ হাজারের মত বাংলাদেশি লকডাউন এলাকায় রয়েছেন। তারা বেশ অর্থকষ্টে আছেন। তাদের কাজ নেই, পয়সাও নেই। অবশ্য কাতার চ্যারিটি এবং রেড ক্রিসেন্ট কিছু এলাকায় খাদ্য সহায়তা পৌঁছাচ্ছে। কাতারে শিল্প এলাকা, মসজিদ, কার্গো এবং স্পেশাল ফ্লাইট ছাড়া সব ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। তবে সব এলাকা লক ডাউন নয়। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার কাতার প্রবাসী সৈয়দ রমিজ আলি সুরুক, সৈয়দ ইমরান অালি, জুনেল,অাসাদ চৌধুরি এবং মৌলভীবাজার সদরেরশাহ মাহফুজ থাকেন দোহার অদূরে বিভিন্ন এলাকায় থাকেন। তারা বলেন, যে এলাকায় করোনা রোগী পাওয়া যায় সেটি পুরোপুরি লকডাউন করা হয়। তবে তারা এখনও লক ডাউনের আওতার বাইরে আছেন। বুথাইলিয়া ফার্ম এলাকার মসজিদের খতিব কুমিল্লার দেবিদ্বার থানার বাসিন্দা মাওলানা আবদুল মতিন জাকির জানান, প্রায় ২০০ বাংলাদেশির বাস ওই ফার্ম এলাকায়। তারা এখনও ভাল আছেন। বাংলাদেশে থাকা স্বজনদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় হয় জানিয়ে তিনি বলেন, কাতারে সবাই আইন মানে। এ কারণে এখনও রোগটা নিয়ন্ত্রণে আছে। বাংলাদেশেও সবার সরকারী নির্দেশনা মানা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Share.