প্রচণ্ড গরমে লকডাউন উপেক্ষা করে ব্রিটেনে খোলা আকাশের নিচে সাধারণ মানুষ

0

ডেস্ক রিপোর্ট: এক দিকে লকডাউন শিথিল, আরেক দিকে প্রচণ্ড গরমে বাসায় থাকা দায়। এমনি পরিস্থিতিতে ব্রিটেনের মানুষ কয়েক দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে চলে আসছে একটু স্বস্তির আশায়। কেউ পরিবার নিয়ে সমুদ্র পাড়ে, কেউ পার্কে, কেউ বাসার পাশের খোলা স্থানে চলে যায় গরম থেকে বাঁচতে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দিনের বেলায় ব্রিটেনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৩. ৩ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন ২৯. ৫ ডিগ্রি। তবে অনেকস্থানে মানুষ শারীরিক দূরত্ব না মানায় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমসিম খেতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার ছিলো ব্রিটেনে এ বছরের উষ্ণতম বা সর্বোচ্চ গরমের দিন। লন্ডনে দুপুর তিনটায় রেকর্ড করা হয় ৩৩.৩ ডিগ্রি। আবহাওয়া অফিসের সূত্র মতে বুধবারের রেকর্ড ভেঙ্গে এটিই এ বছরের সর্বোচ্চ গরমের রেকর্ড। আবহাওয়া রৌদ্রউজ্জ্বল হওয়ায় সকাল থেকেই সমুদ্র সৈকত, খোলা পার্ক, নদী ও লেকের তীরে মানুষের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি মানুষের উপস্থিতি ঘটে বর্ণমাউথ সমুদ্র সৈকতে। স্থানীয় কাউন্সিল লিডার বলেছেন, গত দু’দিনে সমুদ্রের তীর জনসমুদ্রে পরিনত হয়েছে। মনে হচ্ছে ব্যাংক হলিডের মতো লোকজন আসছে। ভাইরাসের কারণে স্থানীয়দের পর্যটকদের থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। তাছাড়া রাতে ক্যাম্প করে থাকা লোকদের বিতাড়িত করতে অতিরিক্ত পুলিশ টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার করোনায় ব্রিটেনে ১৪৯ জনের মৃত্যু খবর নিশ্চিত করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। এরপরও লোকদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব ছিলো না। রাত ৯টা পর্যন্ত বর্ণমাউথ সৈকতে লোকদের ভিড় দেখা যায়। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে বৃহস্পতিবার সমুদ্রে আসা কমপক্ষে ২০০ পর্যটক বিভিন্ন কারণে ঝগড়ায় লিপ্ত হলে বেশ কয়েকজন আহত হয়। ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বর্ণমাউথের মতো ব্রিটেনের অন্যান্য সমুদ্র সৈকতেও প্রচন্ড ভড় পরিলক্ষিত হয়। বর্ণমাউথ ছাড়াও চলতি বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম দিনটি উপভোগ করতে কেন্ট, সাউথ এন্ড সি, স্ট্যান্ড এন্ড টেন্ট, স্যান্ডব্যাঙ্কসের সৈকতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছে। করোনা মহামারির কারণে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হলেও তা উপেক্ষা করে সমুদ্র পাড়ের শহরে প্রচুর গাড়ি ও সূর্যস্নানকারী জড়ো হয়। এর ফলে সেখানে অবৈধ গাড়ি পার্কিং ,অসামাজিক আচরণ দেখা যায় এবং তৈরি হয় অচলাবস্থার। অনেকে মাতাল হয়ে মারামারির ঘটনাও ঘটায়। সৈকত এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ৫০ টনের বেশি বর্জ্য অপসারণ করা হয়।স্থানীয় কাউন্সিলের কর্মকর্তা ভিক্কি স্লেইড জানান, তিনি এই দৃশ্য দেখে একেবারে হতবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, এতসংখ্যক মানুষের দায়িত্বহীন আচরণ এবং কর্মকা- একেবারে বেদনাদায়ক। প্রত্যেককে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে আমাদের পরিসেবাগুলো হিমশিম খাচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, সৈকতের এই ঘটনাকে বড় অঘটন হিসেবে ঘোষণা দেয়া ছাড়া আমাদের হাতে এখন আর কোনো পথ খোলা নেই। আমরা জরুরি মোকাবিলা তৎপরতা শুরু করছি।ব্রিটেনে নতুন করোনাভাইরাসের বিস্তারের গতি কমাতে গত ২৩ মার্চ থেকে শারীরিক দূরত্বের বিধান কার্যকর রয়েছে। বার ও রেস্টুরেন্ট এখন বন্ধ থাকলেও অনেক মানুষ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে কিংবা মদপান করতে দেশটির পার্ক এবং সৈকতে যাচ্ছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ২ মিটার সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। তবে আগামী ৪ জুলাই থেকে বেশ কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। এদিকে সরকারের প্রধান মেডিকেল উপদেষ্টা প্রফেসর ক্রিস হুইটি সবাইকে সর্তক করে বলেছেন, অবশ্যই সবাইকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই মানুষ সূর্য উপভোগ করতে চাইবে, তবে আমাদের এমনভাবে করা দরকার যা সবার জন্য নিরাপদ থাকে।ব্রিটেনে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৭ হাজার ৯৮০ জন এবং মারা গেছেন অন্তত ৪৩ হাজার ২৩০ জন।

Share.